ঢাকা | অক্টোবর ৭, ২০২৫ - ৪:১৮ পূর্বাহ্ন

আমনের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

  • আপডেট: Monday, October 6, 2025 - 9:22 pm

ধামইরহাট প্রতিনিধি: গত বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে লাভবান হওয়ায় নওগাঁর ধামইরহাটে এবার নতুন স্বপ্ন নিয়ে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষক। উপজেলার ২১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করেছেন তারা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে তাজা লকলকে আমন চারা বাতাসে দুলছে। অনেকটা রোগবালাইমুক্ত হিসেবে বেড়ে উঠছে এসব চারা।

চারার তরতাজা চেহারা দেখে কৃষকের মুখেও দেখা দিয়েছে স্বস্তির হাসি। তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই কৃষক এবার রেকর্ড পরিমাণ জমির ধান কাটার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর আদি বরেন্দ্র্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ধামইরহাট উপজেলায় এবার কৃষক ২১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষক।

অধিকাংশ জমিতে স্বর্ণা ৫ জাতের চারা রোপণ করেছেন। এ ছাড়া ত্বরা স্বর্ণা, বিনা ১৭, কাটারিভোগ, ব্রি ধান ৩৪, ৪৯, ৫১, ৭৫, ৮০, ৮৭, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ১০০। এ ছাড়া বিনা ধান ১৭, ২২, ২৬ জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। অনেক জমিতে পোলাওয়ের ধান হিসেবে পরিচিত সুগন্ধি চিনি আতপ, গোল্ডেন আতপ এবং জিরাশাইল জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। চিনি আতপ ধানের বাজারমূল্য সব সময় বেশি। বর্তমানে মাঠে মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, এবার ধানের রোগবালাই অন্যবারের তুলনায় কম। ধান উৎপাদনে সার ও কীটনাশকের তেমন কোনো সঙ্কট ছিল না। বাদামি গাছফড়িং (কারেন্ট পোকা) পোকার আক্রমণ থেকে চারা রক্ষায় কৃষকরা আগাম ব্যবস্থা নেয়ায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে। গত বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের দাম ভালো পাওয়ায় আশা-ভরসা নিয়ে নতুন উদ্যমে বেশি পরিমাণ জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। বিনা ১৭ ধান আগাম চাষ করা হয়েছে।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ ধান কেটে কৃষক সেই জমিতে আলু, সরিষা ও রবিশস্য চাষ করবেন। উপজেলার উমার ইউনিয়নের চাঁনকুড়ি গ্রামে কৃষক আব্দুর রশীদ বলেন, দুই একর জমিতে বিনা ১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। ওই ধান কেটে রবিশস্য হিসেবে আলু ও সরিষার চাষ করবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক আল জুবায়ের বলেন, আমন মৌসুমে কৃষক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ করেছেন।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উঠোন বৈঠক, হাট-বাজারসভা এবং দলভিত্তিক কৃষক সমাবেশ, গ্রাম কৃষক বন্ধু প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, লিফলেট বিতরণ, কৃষি প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের আমন ধানের পোকামাকড় সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। ফলে এবার আমন ধানের রোগবালাই কম। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার এ উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

এদিকে, নওগাঁ জেলায় এবার বোরো ও আমন চাষের মধ্যবর্তী সময়ে অনেক জমিতে আউশ ধান চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকেরা। বোরো কাটার পর তারা আউশ ধান চাষ করেন। এখন আউশ ধান কেটে সেই জমিতে আমন মৌসুমের সুগন্ধযুক্ত চিনি আতপ (চিনি গুড়া) ধান চাষ করার প্রস্ততি চলছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকেরা ৫৮ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছেন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ হেক্টর বেশি।

চলতি বছর উপজেলাভিত্তিক আউশ ধান চাষের জমির পরিমাণ, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, রানীনগরে ৬৮০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর, বদলগাছিতে ২ হাজার ২২৫ হেক্টর, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর। এছাড়া পত্নীতলা উপজেলায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২ হাজার ৭১০ হেক্টর, সাপাহারে ৮০৫ হেক্টর, পোরশায় ৮৫০ হেক্টর, মান্দায় ১৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের সূত্রে, চলতি বছর প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৪.৫০ টন হিসেবে মোট ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩০ টন ধান উৎপাদিত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। এর থেকে চাল পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫ টন।