ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

ফিরছে সোনালী আঁশের সুদিন

  • আপডেট: Sunday, October 5, 2025 - 10:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রোববার রাজশাহীতে প্রতিমন পাট ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা স্মরণকালের মধ্যে পাটের সর্বোচ্চ দাম। এই দামে পাট বিক্রি করে চাষিরা খুশি। সোনালী আঁশের সুদিন ফিরতে শুরু করায় আগামীতে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বৃহস্পতিবারও নওহাটা হাটে ব্যাপক পাটের সরবরাহ ছিল। এই হাটসহ জেলার কেশরহাট, কাকনহাট, বানেশ্বর হাট, তাহেরপুর হাট, তানোরসহ বিভিন্ন হাটে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটের রমরমা কেনাবেচা হচ্ছে। ফড়িয়াদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলার পাঁচটি বেসরকারি জুট মিল সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট ক্রয় করছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার মনপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন কৃষকেরা।

নওহাটার পাট ব্যবসায়ী মুকুল আহমেদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি। কৃষকেরা মনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। গত বছর নতুন পাট বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে। এবার সেই দাম উঠেছে মনপ্রতি ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

উপজেলার দুয়ারী এলাকার কৃষক কালাম জানান, জমি লিজ নেয়া, বীজ, সার, শ্রমিক, সেচসহ সব খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ফলনও ভালো হয়েছে। বিঘায় ফলন পেয়েছি ৯ থেকে ১০ মন। বিঘাপ্রতি খরচ বাদে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি।” তার এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও এবার পাট চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ হেক্টর বেশি। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে গড়ে প্রতি বিঘায় নয় থেকে দশ মন পাট পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে এবার পাট জাগ দেয়ার জন্য পানির অভাব হয়নি। ফলে পাটের রংও এবার ভালো হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানান, আবহাওয়া, ফলন ও দাম অনুযায়ী এবার কৃষক পাট চাষে লাভজনক অবস্থায় আছেন। পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও লাভজনক অর্থকরী ফসল। শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকদের আমরা উৎসাহিত করছি যেন তারা পাটচাষে আগ্রহী হন। আমরা সার, বীজ, আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে জাগ দেয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সহায়তা দিচ্ছি।”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আক্তার জাহান বলেন, “কৃষকের উৎপাদিত পাট যেন ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয়, সে জন্য আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। ব্যবসায়ীরা যেন অযথা দাম কমিয়ে না দেন এবং কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়, এ বিষয়ে বাজার কমিটিকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রপ্তানিযোগ্য ফসল। তাই কৃষককে লাভবান রাখতে হলে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

পাট অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নাদিম আক্তার বলেন, “পাটের বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমরা কাজ করছি। কৃষকদের জন্য বাজারে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিতে ২০১০ সালের বাধ্যতামূলক পাটজাত মোড়ক আইন বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়া কাঁচা পাটের রপ্তানি নীতির কারণে কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।”

তিনি আরও জানান,“রাজশাহী জুট মিলসহ জেলায় মোট সাতটি জুট মিল রয়েছে। এসব মিল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পুঠিয়া উপজেলার রহমান জুট স্পিনার্সের ১০০ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া রহমান জুটমিলের ২০ মেট্রিক টন, হাসেন জুট মিলের ১৮ মেট্রিক টন, নওহাটা জুট মিল ও আমান জুট ফাইবার্সের ১৫ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। বাকি দুই টি জুট মিল বন্ধ রয়েছে।” সব মিলিয়ে এবার কৃষকেরা শুধু ভালো ফলনই পাননি, পেয়েছেন কাঙ্খিত দামও। পাটের দাম এই পর্যায়ে থাকলে আগামীতে আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।