ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

কৃষকদল নেতার বিরুদ্ধে কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ

  • আপডেট: Sunday, October 5, 2025 - 9:32 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আশরাফ মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকার একটি জমি দখলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি গতকাল রোববার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছে। তবে কৃষকদল নেতা আশরাফ মল্লিক জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভুক্তভোগী নারীর নাম ফাতেমা জোহুরা। তার বাড়ি গোদাগাড়ীর বিদিরপুর গ্রামে। তিনি গোদাগাড়ীর পশুণ্ডা মৌজার ১ দশমিক ৪৪৭৫ একর ধানী জমির মালিক। এরমধ্যে দশমিক ৬২ শতক ক্রয়সূত্রে এবং বাকি জমি তিনি স্বামী আবুল হোসেনের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। তার স্বামী ১৯৮৮ সালে মারা যান। এতদিন ধরে তিনি জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। জমির খাজনা-খারিজও আছে ফাতেমার নামে। তবে সম্প্রতি জমিগুলো দখল হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা জোহুরা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরই রওশন আরা বেগম, বাদেনুর বিবি, মাফিয়া খাতুন, টগরি খাতুন ও সাজেনুর বিবি একটি দলিল নিয়ে আসেন। তারা দাবি করেন যে, আবুল হোসেন মৃত্যুর আগে এই জমি তাদের কাছে বিক্রি করে গিয়েছেন। এই দলিল জাল বলে তিনি আদালতে মামলা করেন। আদালতে প্রমাণ হয় যে, দলিল জাল। এরপর এই চক্রটি এতদিন চুপচাপ ছিল। গতবছর সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তারা আবার জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে।

তারা এবার দাবি করেন, আবুল হোসেনের বোন মেহেরজান ও তার ভাতিজা খলিলুর রহমান নাকি বাদেনুর বিবি, সফেদা খাতুন, সাজেনুর বিবি ও টগরি বিবির কাছে জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। অথচ মেহেরজান ও খলিলুর রহমান ১৯৭২ সালেই ভারতে চলে গেছেন। তারা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বৈধতা জানতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী কমিশনার মানজুরা মুশাররফ স্বাক্ষরিত কপিতে জানানো হয়, এ ধরনের কোনো কেস নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তারপরও ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সামনে এনে গত এপ্রিলে মাটিকাটা মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব আশরাফ মল্লিক, মেডিকেল মোড় কোকড়াপাড়ার কারিম মাঝি, লালবাগ গ্রামের আনারুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মাজারগেট এলাকার সুমির তৃতীয়পক্ষ হিসেবে জমিটি দখলে নিয়েছেন। তখন তার জমিতে ধান লাগানো ছিল। এরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গিয়ে ধানী জমিতে মাটিভরাট করে দখলে নেন।

ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে জমি দখলে বাধা দিতে গেলে আমাদের মারতে আসে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে আমরা আর জমির দিকে যেতে পারিনি। পরে আমি ওই জমিতে স্থিতিবস্থা জারির আদেশ পেতে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু দখলদাররা পেশিশক্তি ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলে রেখেছেন।

তারা জমি বিক্রির নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। এছাড়া জমি বিক্রির জন্য সাইনবোর্ডও টাঙিয়েছেন। আমরা থানায় অবহিত করেছি। পুলিশ গেলেও তারা কোনকিছুর তোয়াক্কা করছেন না। এ অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব আশরাফ মল্লিক বলেন, ফাতেমা ও তার স্বামী আবুল হোসেন নিঃসন্তান ছিলেন। আইন অনুযায়ী এই জমি পুরোটিই ফাতেমা পান না। আবুল হোসেনের বোন ও ভাতিজা জমি পান। এ নিয়ে উভয়পক্ষের শালিস হয়েছিল। সেখানে পাঁচজন আইনজীবী ছিলেন। এই পাঁচজনের একজন ছিলাম আমি। জমি আবুল হোসেনের বোন ও ভাতিজা পাবে বলে আমি মতামত দিয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে জমি দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। আমি জমিতেই যাইনি।’