ঢাকা | অক্টোবর ৫, ২০২৫ - ২:১৫ পূর্বাহ্ন

গো-খাদ্যের দাম আকাশচুম্মি, হতাশা-লোকসানে খামারিরা

  • আপডেট: Saturday, October 4, 2025 - 9:52 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের দুগ্ধ ভাণ্ডার নামে পরিচিতি রয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার। উপজেলার রেশমবাড়ি ধলাই নদীর দুপাড়ে গড়ে উঠেছে গোচারণ ভূমি ও ছোট বড় ৩২ টি গরুর বাথান। এ উপজেলাতে রয়েছে প্রায় ৪ লাখ গবাদি পশু তবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গো-পালনে খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে খামারিদের, এতে গো-পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খামারিরা। বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড খ্যাত এ উপজেলার রেশমবাড়ি ধলাই নদীর দুপাড়ে গড়ে উঠেছে গোচারণ ভূমি যা স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয়ে থাকে বাথানভূমি।

ধলাই নদীর দুপাড়ে চোখে পড়ে দিগন্তে বিস্তৃত ফসলের মাঠ আর এ মাঠেই গড়ে উঠেছে গোচারণভূমি। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গোচারণভূমি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে শাহজাদপুরের বাথানভূমির। প্রায় দেড় হাজার একরজুড়ে বিস্তৃত এই বাথানের পত্তন হয়েছিল বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। এই বাথান ভূমিকে ঘিরেই দেশের মোট দুধের চাহিদার সিংহভাগ সরবরাহ হয়ে থাকে শাহজাদপুর অঞ্চল থেকে। আর দুগ্ধ শিল্পের কারণে এ অঞ্চলের খামারিরা অতিতে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়েছেন কিন্তু গো-খাদ্যের দাম বর্তমানে বেশি হওয়ায় এখন লোকসান হচ্ছে বলে জানায় খামারিরা।

দিগন্তবিস্তৃত সবুজ কাঁচা ঘাসের সমুদ্র। মাঝখান দিয়ে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলা ধলাই, গোহালা নদী, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাল-বিল, গবাদিপশুর পাল, এরই মাঝেই বিভিন্ন জায়গায় খড়-বাঁশ-টিনের অস্থায়ী খামার। নিচু এলাকার বাথানভূমিটি বছরের প্রায় ৫ মাসের বেশি সময় থাকে পানির নিচে। সে সময় খামারিরা পশুর পাল বাড়িতে বা উঁচু জায়গায় নিয়ে যায়। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাথানভূমিতে ফের শুরু হয় গবাদিপশুর কোলাহল। বাথানভূমির মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে গবাদিপশুর পাল। ফ্রিজিয়ান, শাহিয়াল গরুগুলোর বাটভর্তি দুধ এবং বিস্তৃত এ চিরসবুজ বাথানভূমি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের গোচারণভূমির কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেকেই আবার শাহজাদপুরের বাথানভূমিকে বলে থাকেন বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, বাথানভূমিতে রয়েছে ছোটবড় ৩২ টি বাথান। এ বাথানভূমিতে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার গরাদিপশু। এ উপজেলাতে ছোট বড় খামার রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার এবং প্রায় চার লক্ষ গবাদি প্রাণী লালন পালন হয়ে থাকে এ উপজেলায়। প্রতিদিন প্রায় ৫ লক্ষ লিটার দুগ্ধ উৎপাদন হয় যার বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব দুধ মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ংসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ সংগ্রহ প্রতিষ্ঠান এসব দুগ্ধ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়। এদিকে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গো-পালনে লোকসান হচ্ছে খামারিদের তাই গো- পালনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খামারিরা।

খামারিরা বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের তাই গো-পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে খামারিরা। কয়েকবছর পূর্বে গোখাদ্যের দাম অনেকটা কম ছিলো তখন গবাদিপশু পালন করে যে দুধ পাওয়া যেতো তাতে গবাদিপশুর খাদ্যের খরচ, রাখালের খরচ সহ অন্যান্য খরচ বাদেও অনেকটা লাভ হতো। গবাদিপশু পালনে বেশ আগ্রহ ছিলো আমাদের কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গো-খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে কিন্তু তুলনামূলকভাবে দুধের দাম খুব একটা বাড়েনি। এতে গো-পালন করে আমাদের লোকসান হচ্ছে। গো-পালনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে যদি গো-খাদ্যের দাম কমানোর মাধ্যমে গো-সম্পদকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে হয়তো খামারিরা লাভবান হবে এবং গো-পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ. বিল্লাল হোসেন জানান, গো- খাদ্যের দাম বেশি হওয়ার ফলে খামারিদের কম খরচে উন্নত জাতের ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়াতে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সেই সাথে বিনামূল্যে উন্নত জাতের ঘাসের বীজ দেয়া হয়। এ ঘাস চাষ করলে কম খরচে খাদ্য চাহিদা পূরণ হবে এবং খামারিরাও লাভবান হতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতার পাশাপাশি গরুর খোড়ারোগ, তর্কারোগ সহ সকল রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।