বরেন্দ্র ভূমিতে মরুর ফলের বাণিজ্যিক চাষ

অন্য ফলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভজনক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বরেন্দ্র ভূমির চাঁপাইনবাবগঞ্জে। মধ্যপ্রাচ্যের বাঙ্গি জাতীয় এই ফল চাষে সফলতাও পেয়েছেন জেলার চাষিরা। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় কম সময় ও খরচে বেশি লাভের দেখা পেয়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে এই ফল চাষে লাভ ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। যা উৎসাহী করছে অন্য চাষিদের। নতুনজাতের পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফল চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
আগ্রহীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কৃষি বিভাগের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে গাছে ঝুলছে তরমুজের মত দেখতে মরুর সুস্বাদু ফল ‘সাম্মাম’। বাইরে থেকে দেখতে খসখসে হলেও ভেতরটা পেঁপে রঙের এই সাম্মাম ফল খেতে মিষ্টি, রসালো আর পুষ্টিগুণে ভরপুর। দেশে এই ফলের চাষ নতুন না হলেও প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষে সফলতা পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার কৃষক আমিরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করলেও নতুন-নতুন সবজি ও ফল-ফসল চাষাবাদের শখ থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’ চাষ দেখে উৎসাহী হন। পাশে পান স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতাও। আমিরুল ইসলাম প্রথমবারের মত দেড় বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষ করে পেয়েছেন বাণিজ্যিক সফলতাও। জমি থেকে এরই মধ্যে ফলটি বাজারজাত শুরু করেছেন।
খেত থেকেই পাঠাচ্ছেন ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যাপারীদের কাছে। আশা করছেন বিঘা প্রতি আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রির। আমিরুলের মত নতুনজাতের এ ফল চাষে বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছেন ভোলাহাট উপজেলার আব্দুল হামিদসহ আরও কয়েকজন চাষি।
ফলটি মরু অঞ্চলে চাষ হলেও ভোলাহাটের মাটির উপযোগিতা থাকায় দেশের মাটিতে চাষ করে বাজিমাত করেছেন কৃষকরা। এই ফলেরচাষ করে ভালো বাজারমূল্য পাওয়ায় লাভের আশা করছেন তারাও। বলছেন, কম সময়ে এ ফলের চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে কয়েকগুণ লাভবান হওয়া সম্ভব।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী জানান, বরেন্দ্র ভূমিতে যেখানে পানির সঙ্কট, সেখানে উচ্চমূল্য ও স্বল্পসময়ে বাণিজ্যিকভাবে সাম্মাম চাষে সম্ভাবনার কথা বলছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। এই ফলচাষে রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব কম এবং বাড়তি সারের চাহিদাও কম।
ফলটি চাষে চাষিদের আগ্রহ, বাজার মূল্য ও চাহিদা ভালো হওয়ায় আগামীতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় প্রথমবারের মত ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়া গেছে। দেখতে সুন্দর এবং এর চাহিদা বেশি থাকায় এই ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে জেলার কৃষকদের মাঝেও।