বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলার পৌরসভাগুলোর একটি বড় সমস্যা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর প্রক্রিয়া বা ডাম্পিং স্টেশন নেই। যেখানে রাজশাহী জেলায় শুধুমাত্র চারঘাট পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেখানে জেলার ১৩ পৌরসভায় শুধু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আটকে থাকতে হয়েছে। ফলে এসব পৌর এলাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, ড্রেন, পুকুর কিংবা নদীতে। এই অবস্থা গ্রামীণ অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৪টি পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলমান, কিন্তু নানা সমস্যার কারণে দীর্ঘদিনেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। বর্জ্য সংগ্রহ ও নির্দিষ্ট জায়গায় নেয়ার জন্য কোটি টাকায় কেনা যানবাহন ও সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় এখন সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভাগুলো প্রতিবছর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
জানা গেছে, নওহাটা পৌরসভায় কোনো ভাগাড় নেই। পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বারনই নদীতে। একই নদীতে বাগমারা ও তাহেরপুর পৌরসভা থেকেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। দুর্গাপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় হোজা নদীতে। গোদাগাড়ী পৌরসভা ফেলে পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে। কাটাখালী পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ফেলা হয় সিটি হাটের ভাগাড়ে। তবে বেশিরভাগ ময়লা ফেলা হয় কাটাখালী বাজার এলাকার ড্রেনে, ফলে বৃষ্টির সময় ড্রেন ভরে গিয়ে পানি জমে থাকে। বাঘা পৌরসভায় নির্ধারিত জায়গা থাকলেও বর্জ্য ফেলা হয় শাহী মসজিদের পুকুরে।
বাঘা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন ও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, পুকুরে বর্জ্য ফেলার কারণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই পুকুরটিতে গোসল করলে চর্মরোগ বা ডায়রিয়া শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে খোলা জায়গাতেও বর্জ্য ফেলা হয়, আবার ফেলা হয় ড্রেনে, যা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। জমে থাকা পানিতে মশা জন্মায়, সেই মশা-মাছি থেকে নানা রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে।
স্কুল শিক্ষিকা সাকিলা খাতুন বলেন, বারনই নদী নওহাটা থেকে বাগমারা ও তাহেরপুর হয়ে গেছে। নওহাটা পৌরসভার বর্জ্য নদীতে ফেলা হলে তা ভেসে গিয়ে অন্য এলাকাগুলোতেও পৌঁছায়। এসব বর্জ্য পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়, জীবাণু ছড়ায়। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো বর্জ্য অপসারণ ও ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অথচ রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে কেবল চারঘাট পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তবে সেটিতেও নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র। আসলে জেলায় কোনো পৌরসভারই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় চর্মরোগ ও ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়া বর্জ্য থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণে হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন বিভিন্ন ধরনের দূষণ তৈরি হচ্ছে, যা থেকে রোগ ছড়াচ্ছে। পরিবেশগত সমস্যাগুলো আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাটাখালী, তাহেরপুর, বাঘা ও গোদাগাড়ী পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলছে। কিন্তু জমি না পাওয়া, প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রকল্পগুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ডাস্টবিন, ভ্যান, ভ্যাকুটাগসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার পথে।
কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসক জাহিদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, মানবসৃষ্ট বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখনো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা পাইনি। উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে।
রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, পচনশীল বর্জ্য থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়, যা নানা রোগের কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতে এটি আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।