ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫ - ৫:২১ পূর্বাহ্ন

কেশরহাটের কামারপল্লীতে শতবর্ষী ঐতিহ্য হারানোর পথে

  • আপডেট: Saturday, September 27, 2025 - 10:59 pm

আনছার তালুকদার স্বাধীন, মোহনপুর থেকে: রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর বাজারে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক কামারপল্লী। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘কামারহাট’ নামে। শত বছর ধরে এ এলাকার কামারেরা লোহা গরম করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা সরঞ্জাম তৈরি করে আসছেন।

গ্রামীণ কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত দা, কোদাল, খুন্তি, শাবলসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিই তাদের প্রধান উৎপাদন। একসময় এসব হাতের তৈরি লোহার জিনিসপত্রের জন্য কেশরহাটের কামারহাট ছিল ক্রেতাদের ভিড়ে মুখর।

কামাররা জানান, পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রেখে আজও তারা দিনরাত পরিশ্রম করে এসব জিনিসপত্র তৈরি করেন। তাদের বিশ্বাস, কঠোর শ্রম ও দক্ষ হাতে গড়া এসব সরঞ্জাম টেকসই ও কার্যকর। কৃষকরা একসময় চাষাবাদে প্রধান ভরসা রাখতেন এই কামারপল্লীর তৈরি দা-কোদালের ওপর।

তবে সময়ের পরিবর্তনে সেই কদর আজ আর নেই। বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল ও চীনা যন্ত্রপাতি সহজলভ্য হওয়ায় কামারদের বেচাকেনা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যুক্ত হচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, কামারশিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্যেরও অংশ।

তাই সরকারের সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ছাড়া এ শিল্প টিকে থাকা কঠিন। কামাররা যদি আর্থিক সহযোগিতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পান, তবে আবারো তারা এ পল্লীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন। কামারপল্লীর প্রবীণ কামাররা বলেন, আমরা এই কাজ করে বহু প্রজন্ম ধরে সংসার চালিয়েছি।

এখন বেচাকেনা কমে গেছে, কিন্তু এই পেশা আমাদের রক্তে মিশে আছে। যদি সরকারি সহযোগিতা পেতাম, তাহলে আবারো ভালোভাবে চলতে পারতাম। এক সময়কার জমজমাট কেশরহাটের কামারহাট এখন নীরব। ক্রেতার অপেক্ষায় দিনের পর দিন ফাঁকা বসে থাকেন কারিগররা। তবুও তারা বিশ্বাস করেন, মানুষের হাতে গড়া এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প একদিন আবারো নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।