ঢাকা | অক্টোবর ৩, ২০২৫ - ১:২৩ অপরাহ্ন

রাজশাহী-চাঁপাই-নাটোর থেকে এখনও বাস চলাচল বন্ধ

  • আপডেট: Friday, September 26, 2025 - 11:00 pm

যাত্রীদের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে ঢাকার বাস চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। এবার বাস বন্ধ করে দিয়েছেন খোদ মালিকেরাই। এতে দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিন জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকল্প উপায়ে তাঁরা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।

এই রুটে বর্তমানে একতা পরিবহনের বাসগুলো চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী রুটে লোকাল বাস চলছে। অন্য পরিবহনের বাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব বাসের মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের টানাপোড়েন চলছে। কবে বাস চালু হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এর আগে চলতি মাসেই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দুই দফা ঢাকার বাস বন্ধ করে দেন চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা।

বাস মালিকপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এরপরও তাঁরা অযৌক্তিক দাবি সামনে আনছেন, যা মেনে নেয়া সম্ভব না। শ্রমিকদের সঙ্গে না পেরে তাঁরা নিজেরাই এবার বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে মালিকদের দাবি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালক প্রতিটি ট্রিপে ১ হাজার ২৫০ টাকা, সুপারভাইজার ৫০০ টাকা ও সহকারী ৪০০ টাকা পান। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। দুই দিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তাঁরা ফের বাস চালানো শুরু করেন। কিন্তু আশ্বাস অনুযায়ী বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা না হলে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা।

শ্রমিকদের দুই দফা আন্দোলনের পর গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মালিক-শ্রমিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে চালককে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৭৫০ টাকা ও সহকারীকে ৭০০ টাকা দেয়া হবে। মালিকদের অভিযোগ, বেশি বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শ্রমিকেরা বিনা টিকিটের যাত্রী তুলছিলেন। আর শ্রমিকদের অভিযোগ, বাড়তি টাকা দেয়ার কথা হলেও বাস্তবে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকেরা। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকে। রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। চাপ বেড়েছে একতা পরিবহনের বাসে। এ ছাড়া কষ্ট করে অনেকে লোকাল বাসে ওঠার চেষ্টা করছেন। তবে বাড়তি চাপে লোকাল বাসেও ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা হয়েছে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগেই মালিকপক্ষ হঠাৎ করে বাস বন্ধ করে দিয়েছে এই বলে যে, তারা বাড়তি বেতন দিতে পারবে না। এখন শ্রমিকেরা বসে আছে। গাড়ি চালালে তারা চালাবে। তা না হলে তো মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।’

তবে বাস বন্ধের অন্য কারণ বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বজলুর রহমান রতন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ঢাকায় বসা হয়েছিল। তাঁদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

সভা সুন্দরভাবেই শেষ হয়। এরপর বাস চলাচলও শুরু হয়। কিন্তু বাড়তি বেতন দেয়ার কথা হওয়ার পর এখন শ্রমিকেরা যেখানে সেখানে বিনা টিকিটে যাত্রী তুলতে চাইছেন। খোরাকি ভাতা দাবি করছেন। এসব তো মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এভাবে বাস চালাতে চাই না। কয়দিন বসে থাকবে থাকুক।’

এর আগে চলতি মাসেই বাস কোম্পানির চালক, সহকারী ও সুপারভাইজাররা দুই দফা বাস বন্ধ করেছিলেন। এবার তৃতীয় দফায় বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারের যাত্রীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন।