ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫ - ২:৩৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাবি বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচি ‘আপাতত’ স্থগিত ঘোষণা

  • আপডেট: Thursday, September 25, 2025 - 11:26 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ দিনে টানা কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি ‘আপাতত স্থগিত’ করেছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তবে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে আবারও কর্মসূচি আসতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ দিকে শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে ফিরেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে গত শনিবারে উপ-উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। পরে গত সোমবার থেকে তারা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ১০ শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে টানা আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার বিকেলে তাদের সঙ্গে উপ-উপাচার্য, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। পরে উপ-উপাচার্য ও শিক্ষকদের লাঞ্চনার অভিযোগ তুলে গত রোববার এক দিনের জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। কর্মবিরতি এক দিনের ঘোষণা দেওয়া হলেও রবিবারের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হলে সর্বাত্মক শাটডাউন কর্মসূচিতে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম মানববন্ধন কর্মসূচিতে যায়। তাদের ঘোষিত কর্মসূচিতে সংহতি জানায় জামায়াতপন্থি শিক্ষকরাও।

তবে গত বুধবার জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা দাবি করেন, বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মানববন্ধন কর্মসূচির পরদিন থেকে বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা কর্মসূচি স্থগিত করবেন এবং কাজে ফিরবেন। তবে তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। এতে জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা কর্মসূচি থেকে তাদের আলাদা করে নেন। এ দিকে শিক্ষকদের কাজে না ফেরা এবং পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিতিশিলতার জন্য শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ায় নির্বাচন পেছায় কমিশন। এই পরিস্থিতিতেও শাটডাউন কর্মসূচি গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন তারা। পরে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ‘মৌখিক’ আশ্বাসে কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

কর্মসূচি প্রত্যাহার করে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘গতকাল দুপুর ১২ টায় প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে উপাচার্য মহোদয়ের আহ্বানে রাবি শাখা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃত্বে জিয়া পরিষদ ও ইউট্যাবের শিক্ষকবৃন্দের এক আলোচনা সভা হয়। সভায় আলোচনা শেষে উপাচার্য ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, ‘উপাচার্যের মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে এবং রাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আপাততঃ স্থগিত ঘোষণা করছে। যদি দ্রুততম সময়ে দোষীদের শাস্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করা হয়, সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ে স্থগিতকৃত কর্মসূচি পুনরায় গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।’

এদিকে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে শিক্ষক ফোরাম সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ে স্থগিতকৃত কর্মসূচি পুনরায় গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।’

আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচনের আগে আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আলিম বলেন, ‘রাকসু কার্যক্রম স্বাভাবিক-গতিশীল রাখার জন্য আমাদের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে। কর্মসূচির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পদক্ষেপ নির্ভর করছে।’

বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে একটা বোঝাপড়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে এই বোঝাপড়ার মধ্যে আসতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু চিন্তার মানুষ আছে। আমাদের সবাইকেই সমন্বয় করে চলতে হবে। আগামী ১৬ তারিখে আমাদের রাকসু নির্বাচন। এর জন্য ব্যালট বাক্সসহ সকল কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে। মাঝের এই সময়ে আমরা সংকট গুলোর সমাধান করে ফেলতে পারব।’

কাজে ফিরেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আহ্বানে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ৭ দিনের জন্য স্থগিত করে গতকাল কাজে ফিরেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল প্রায় সব দপ্তরের তালা খোলা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, একাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরের তালা খোলা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন। যথাসময়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। ক্যাম্পাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ও সামনে দুর্গাপূজার ছুটি থাকায় অনেকেই বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, প্রশাসনের আহ্বানে তাঁরা গতকাল কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তাঁদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজে ফিরেছেন। সব দপ্তরের দাপ্তরিক কাজ চলমান আছে।