গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় বাড়িতে হামলা, বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় দায়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও পরিবারের লোকজনদের তালাবদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এসময় হামলাকারীরা বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ দুটি বৈদ্যতিক মিটার ভাঙচুর ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের তালাবদ্ধ থেকে মুক্ত করে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাতে উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের আলেফ হোসেনের ছেলে রশিদুল ইসলামের বাড়িতে। এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রশিদুলের ভাই নিকিদুল ইসলাম (৩০) বাড়ির মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় জানালা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার বড় ভাই রেজাদুল ইসলাম ও ভাবীর মধ্যে মনোমানিল্য হবার কারনে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ভাবী। চলতি মাসের ৭ তারিখে বাবা আলেফ হোসেন মারা গেলে দাফন কাফনের জন্য ভাবী এসে বাড়িতে উঠতে চাইলে পরিবারের লোকজন বাধা দেয়।
এর পর দাফন শেষ হলে আবারো ভাবী বাড়িতে উঠতে চাইলে ভাবীর খালাতো ভাই রঞ্জনিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে গত রোববার দুপুরে আবারো সাইফুল ইসলাম ও রশিদুলের স্বজনদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার কথা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই দিন বিকালে লোকমারফত খবর দেয়া হয় রাতেই সালিশ বৈঠক হবে। এরপর সন্ধায় আবারো কয়েকজন এসে জানান, রাতেই বৈঠক হবে এবং হাজির থাকতে হবে। এসময় বৈঠকের দিন পরিবর্তন করার কথা বললে তারা কোন কথা শোনেনি।
রাতেই বৈঠক বসে আমাদেরকে আবারো হাজির হতে বলে। নিকিদুল বলেন, সালিশে হাজির না হওয়ায় ইউনুস আলী, ফিরোজ হোসেন, আতোয়ার হোসেনসহ গ্রামের লোকজন এসে বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ এসে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে চলে যায়। পুলিশ চলে যাবার পর রাত ৩ টায় আবারো লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং দুটি মিটার ভাঙচুর করে। এছাড়া পানির লাইন বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির বাহিরে মেইন গেটে তালা দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে। এঘটনায় ভাই রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার দুপুরে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রশিদুল ইসলাম বলেন, রাতে যখন পুলিশ এসেছিল ওই সময়ই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিই। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় থানায় লিখিত অভিযোগ করলে রাণীনগর থানা পুলিশ দুপুর ১টার দিকে এসে তালাবদ্ধ থেকে পরিবারের লোকজনদের মুক্ত করে। তারা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন। গ্রাম্য মাতাব্বর ইউনুস আলী ও আতোয়ার হোসেন বলেন, রশিদুলের ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রায় ৩৫/৪০জন ভারাটিয়া লোকজন এনে গ্রামের সাইফুলের ওপর হামলা ও মারপিট করে গুরুতর আহত করে রশিদুলের লোকজনরা। সাইফুলকে প্রথমে রাণীনগর এবং পরে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়। এ ঘটনাটি সমাধানের জন্য রোববার রাতে গ্রামে সালিশ ডাকা হয়েছিল।
কিন্তু রশিদুল ও তার পরিবারের লোকজন সালিশে হাজির না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের লোকজন খুঁটি থেকে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে গ্রামের কোন লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা বা মিটার ভাঙচুর কিম্বা তালাবদ্ধ করেনি। এগুলো রশিদুলের লোকজন করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। এ ব্যাপারে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জুলফিকার আলী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদ্ধ অবস্থা থেকে পরিবারের লোকজনদের মুক্ত করা হয়েছে। রাণীনগর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বাবলু চন্দ্র পাল বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পর সেখানে এসআই জুলফিকারকে পাঠিয়ে তালাবদ্ধ থেকে ওই পরিবারকে মুক্ত করা হয়েছে। বাদী মামলা দায়ের করলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।