ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫ - ৫:৪০ পূর্বাহ্ন

কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা, আমেজ নেই শাখা পল্লীতে

  • আপডেট: Monday, September 22, 2025 - 9:50 pm

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরে বাগাতিপাড়ায় জামনগর শাঁখা পল্লীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত দুর্গোৎসব উপলক্ষে কারিগরদের ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। আগের দিনে সারাদিন কারিগররা শাঁখার বালাসহ অন্য সামগ্রী তৈরি ও কারুকার্যে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু চলতি বছর নানা প্রতিকূলতায় সেই আমেজ আর নেই নাটোরের বাগাতিপাড়ার শাঁখা পল্লীতে। এতে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ী ও কারিগররা। জামনগর শাঁখাপল্লীতে শতাধিক হিন্দু পরিবারের বসবাস।

এরা বণিক সম্প্রদায়। জামনগর ডিগ্রি কলেজের পাশেই শাঁখাপল্লীর অবস্থান। এ পল্লীর বেশির ভাগ নারী-পুরুষ শাঁখা শিল্পের সাথে জড়িত। বর্তমান শাঁখা ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা। জামনগর শাঁখা পল্লীর নারী-পুরুষ শাঁখা শিল্পে সংপৃক্ত। পুরুষ কারিগররা আমদানিকৃত শঙ্খ মেশিনে কেটে বালা ও আংটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে।

পরে নারী ও পুরুষ শিল্পীরা নিপুণ হাতে এগুলোর উপর কারুকার্য করেন। সনাতন ধর্মালম্বীরা শঙ্খ/শাঁখা সামগ্রী বেশি ব্যবহার করেন। স্বধবা নারীরা শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। হিন্দু নারীর বিয়ের সময় গৌরিপূজা শেষে বণিক সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি বা ঠাকুর কন্যার হাতে শাঁখার বালা পরিয়ে দেন। বিবাহিত নারীরা স্বামীর আমৃত্যু শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর লাশ দাহের পূর্ব মুহূর্তে হাতে বালা ভেঙে ফেলে দেয় এবং সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে।

অপরদিকে সনাতন ধর্মালম্বীরা শঙ্খ ফুঁকিয়ে সুমধুর সুর সৃষ্টির মাধ্যমে পূজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করেন। এছাড়া পল্লী’র সব সম্প্রদায়ের অসংখ্য নব বঁধু ও কিশোরী মুখের দাগ দূরিকরণে শাঁখার গুড়ো কচি ডাবের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া কসমেটিকস তৈরিতে শাঁখার গুড়ো ব্যবহার হয়। ব্যবসায়ি কালিপদ চন্দ্র ধর জানান, শাঁখা ব্যবসায় ধ্বংস নেমেছে। নানা প্রতিকূলতায় শাঁখা ব্যবসা মন্দা। পৈত্রিক পেশাকে টিকিয়ে রাখাই যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আসন্ন দুর্গোৎসবকে সামনে রেখেও ব্যবসায় উন্নয়নের তেমন লক্ষণ নেই।

জামনগর “ সেন শঙ্খ শিল্পালয়” এর মালিক কেশব সেন ও মানিক সেন জানান, ব্যবসা বড় মন্দা। তবুও নিয়মিত সরকারি কর পরিশোধ করতে হন। এবার দুর্গোৎসবে মেলা বসার সম্ভাবনাও কম। শাঁখার তৈরি সামগ্রী উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি হবে না। আমরা আর্থিক সঙ্কটে ধাবিত হচ্ছি। কারিগর দম্পতি অদৌত কুমার সেন (৪৫) ও স্মৃতি রানী সেন (৪০) জানান, তাঁরা শাঁখা শিল্পের কারিগর। প্রতিজোড়া বালা কারুকার্যে মজুরি পান দশ টাকা। চলতি বছরে শাঁখা শিল্পের কাজ কম।

মাঝে মধ্যে তাঁরা কাজ পান। সারাদিনে গড়ে এক হালা অর্থাৎ পঞ্চাশ জোড়া বালায় কারুকার্য করতে পারেন। এতে তাঁদের আয় হয় সাড়ে চারশত টাকা থেকে পাঁচশত টাকা। জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাঁখা শিল্পে সংপৃক্তদের সাধ্যমত আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতা করা হয়।