ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫ - ৪:০০ পূর্বাহ্ন

আড়াই লাখ মানুষের ‘এক টুকরো জ্ঞানপিঁড়ি’

  • আপডেট: Monday, September 22, 2025 - 10:14 pm

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: ১৯৯৮সালে রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রথমবার কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি গ্রন্থাগার। সেটি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির দ্বিতীয়তলা।

শুরুতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও দেখভালের অভাবে ২০০৬ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে আড়াই লাখ মানুষের উপজেলায় ছিল না। কোন গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী। সুশীল সমাজের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল যেন উপজেলায় স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয় একটি লাইব্রেরী।

তবে সেই দাবি এবার পূর্রণ করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন। উপজেলা চত্বরে গড়ে তুলেছেন সবার জন্য উন্মুক্ত তালা বিহীন একটি লাইব্রেরি। স্টলের দরজা আছে, তালা নেই। যার খুশি বই নিয়ে পড়ছেন। যার নাম রাখা হয়েছে জ্ঞাণপিড়ি। গ্রন্থাগার ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। উপজেলায় সেবা নিতে মানুষজনও বসে বই পড়ার মত একটা জায়গা পেয়ে বেজায় খুশি।

স্থানীয় সাংবাদিক আগুন ইসলাম মুন্না বলেন, উপজেলায় নিউজ কাভারে এসে উপজেলা মাঠে দাড়িয়ে থাকতে চোখে পড়ল। কাছে এসে দেখি অনেক গুলো বই। এই পাঠাগারের নাম জ্ঞাপিঁড়ি। এটি একটি দারুণ মহতি উদ্দ্যোগ। মুন্না বলেন, আড়াই লাখ জনবসতি এই উপজেলায় বই পড়ার লাইব্রেরি নেই। এ নিয়ে প্রায় মাসিক মিটিংয়ে কথা উঠত। কিন্ত লাইব্রেরি আর গড়ে উঠতো না। তবে এবার হয়েছে। উপজেলায় সেবা নিতে আসা অপেক্ষারত মানুষজন বই পড়ে সময় কাটাতে পারবেন।

উপজেলা চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, জ্ঞানপিঁড়ি নামে সদ্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি পাঠাগার। স্টলের তাকে সাজানো হয়েছে সারি সারি বিভিন্ন ধরনের বই। তাক থেকে বই নিয়ে পড়ছেন বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষজন। পড়া শেষে আবার যথাস্থানে আবার বই রেখেও দিচ্ছেন। দরজা আছে, তালা নেই। যার খুশি বই নিয়ে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, উপজেলায় আগত দর্শনাথীদের বইমুখী করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্দ্যোগ নেন ইউএনও সাবরিনা শারমিন। উপজেলা চত্বরে সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে গড়ে তুলেন এই জ্ঞাণপিড়ি। সম্প্রতি এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার।

স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম আজা বলেন, উপজেলা কোন সরকারি বেসরকারি পাঠাগার ছিল না। এরআগে ১৯৯৮ সালে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যোগে শিল্পকলা একাডেমীতে পাবলিক লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়। পরে ওই ছাত্ররা আর না থাকায় পাবলিক লাইব্রেরীটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২৩ বছর ধরে এই উপজেলায় কোন পাঠাগার নেই। উপজেলা একটি পাঠাগার কেন নেই? এটা নিয়ে সুশীল সমাজের অনেক অভিযোগ ছিল। এখন উপজেলায় আসলে হাতে সময় থাকলে ‘জ্ঞানপিঁড়ি) বই পড়া যাবে। ইউএনওর এমন উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষজন আসেন। এই উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোন পাঠাগার নেই। আমরা দেখেছি সেবা নিতে আসা অপেক্ষারত মানুষজন গল্প ও মোবাইল দেখে সময় কাটায়। তাদেরকে বইয়ের সঙ্গে সর্ম্পক তৈরি করে দিতে এই পাঠাগার তৈরি করে দিয়েছি। এতে নতুন প্রজন্ম সব বয়সী মানুষেরা সুফল পাবেন।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, নানান কাজে উপজেলায় সেবা নিতে আসেন সেবাগ্রহীতারা। অনেক সময় ভিড়ের কারণে দেরি হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেকই অলস বসে সময় কাটায়। এমন চিন্তা ভাবনা থেকে এমন উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এর উদ্বোধন করে এসেছি।