ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫ - ৪:২৫ পূর্বাহ্ন

পানিতে ডুবেছে স্কুল প্রাঙ্গণ, শিক্ষার্থীরা ভুগছে চর্মরোগে

  • আপডেট: Sunday, September 21, 2025 - 9:32 pm

দুর্গাপুর-লালপুরে একই চিত্র:

মিজান মাহী ও লালপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামে অবস্থিত জয়কৃঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রতিবছরই বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। জলাবদ্ধা থাকে বছরের প্রায় তিন মাস। তাই হাঁটু সমান পানির ওপর দিয়ে শ্রেণিকক্ষে যেতে হয় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এতে র্চম ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে বিদ্যালয়গামী শিশুদের। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রমও। অন্যদিকে, নাটোরের লালপুরে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জ্যোতগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা ও খেলার মাঠ ডুবে গেছে নোংরা পানিতে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ভুগছে চর্মরোগে।

সরেজমিনে দুর্গাপুরের জয়কৃঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপত্র মাত্র একটি। পুরো মাঠে শুধু জলাবদ্ধতা। বিদ্যালয়ে মাঠ নিচু আর তার চারদিকে পুকুর। বর্ষাকালে পুকুরগুলো ভরে পানি উঠে বিদ্যালয় মাঠে। জলাবদ্ধতা থাকে আড়াই থেকে তিনমাস। এ সময়টিতে পানির মধ্যে দিয়েই শিশুদের ক্লাসে যেতে হয়। বিদ্যালয়ে খেলার কোন জায়গা নেই। তাই বিদ্যালয় থেকে একটু দুরে বিরতি সময়ে শিশুরা একটি আমবাগনে খেলাধূলা করছেন।

স্থানীয় মহল্লার বাসিন্দা আশরাফুল আলম জানালেন, এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। সরকারি কোন প্রকল্প পেলে ভরাট ও ওয়াল প্রাচীর করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু কেউ করে না। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে প্রতিবছরই জলাবদ্ধাতায় পড়ে। বিকল্প কোন সড়কও নেই। পানি ভেঙে শিশুরা স্কুলে যায়। প্রায় মাস তিনেক এ জলাবদ্ধতা থাকে। এসময় শিশুরা স্কুলে এসে খেলাধূলার জায়গা পান না। আরেক অভিভাবক জেসমিন সুলতানা বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে ভীষণ ভয়ে থাকি। এখন সাপের উপদ্রব। পানি ডিঙিয়ে বাচ্চারা যায়। সাপের কামড়ে যে কোন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গত দেড় মাস থেকে জলাবদ্ধতা দেখাচ্ছে। আমার বাচ্চার পায়ে ইতিমধ্যে চুলকানি হয়েছিল।পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। আমরা চাই এর একটি স্থায়ী সমাধান। বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানা রাইসা ও হাসান বাবু বলেন, ক্লাসে আসলেও পানি বের হলেও। এই নোংরা পানিতে চলাফেরা করলে বাড়ি গেলে পা চুলকায়। পড়ায় মন বসে না। এছাড়াও এই নোংরা পানিতে যাওয়া আসা করায় দুইবার ডায়রিয়াও হয়েছে। আবার মাঠে পানি থাকায় খেলাধূলাও করতে পারি না। দ্রুত এর সমাধান হওয়া বলে জানান এই শিশু শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, প্রতি বছরই আমরা এ দুর্ভোগে পড়ি। কিন্তু কোন সমাধান পাই না। শিশুদের নানা অভিযোগ খেলার জায়গা নেই। জামা-কাপড় ভিজে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত। প্রধান শিক্ষক দেলসাদ আলী বলেন, তার বিদ্যালয়ে ১৭২জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

এছাড়াও ৬ জন স্টাফ কর্মচারী রয়েছে। পড়ালেখার মানও ভালো। তবে বছরে প্রায় তিনমাস বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতা থাকায় সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শিশুরাও পানি ডিঙিয়ে ক্লাসে আসতে বিরক্তি প্রকাশ করে। জলাবদ্ধতা রোধে কী সমাধান আছে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট ও ওয়াল প্রাচীর দিলেই এ জলাবদ্ধতা রক্ষা করা সম্ভব। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়েছি অনেকবার। পরিদর্শনও হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার এ সময় বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসেন বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মাহবুব হাসান।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে মাঠে এমন জলাবদ্ধতা পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করতে পারে। বিষয়টি দেখে আমি শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনওকে জানিয়েছি। তারাই ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সেখানে পানি নামানোর কোন ব্যবস্থা নেই। হয়তোবা আপনারা (সাংবাদিকরা) সেটাই দেখছেন। আমিও বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করছি। সেখানে শুকনা মৌসুম ছাড়া কাজ করা যাবে না। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি পানি নেমে গেলে শুকনা মৌসুমে মাটির ভরাট ওয়াল প্রাচীর নির্মাণ করে দেয়ার। এ ব্যাপারে ইউএনও মহাদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।

এই শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, শুধু এই বিদ্যালয় নয়; আরও দু একটি বিদ্যালয়ে এরকম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেখানে পাইপ দিয়ে পানি নামানো গেছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ে পাইপ দিয়ে পানি নামানোর ব্যবস্থা নেই। তাই সাময়িক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আশা করছি শুকনা মৌসুমে কাজ হয়ে গেলে আগামীতে এরকম বিড়ম্বনা আর হবে না। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, বিষয়টা নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়ে দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে, গতকাল রোববার সকালে লালপুরের জ্যোতগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে বসন্তপুর বিলের পাশে একতলা স্কুল ভবন। চারপাশে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। বিলের পানি প্রবাহের মুখে স্থানীয়ভাবে পুকুর কেটে মাছ চাষ করায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ।

ফলে পানি আটকে বিদ্যালয়মুখী পথে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলবদ্ধতা। এ অবস্থায় স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় গুটিয়ে কিংবা জামা কাপড় সামলে প্রতিদিন সেই পানি মাড়িয়ে স্কুলে আসছে শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় পা পিছলে ভিজে যাচ্ছে বইপত্রও। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আবু সাইদ জানান, স্কুলে আসা-যাওয়া খুব কষ্টকর। পানি পার হওয়ার পর শরীর চুলকায়। অনেক বন্ধুর শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মাসুম বলেন, জলাবদ্ধতায় বিদ্যালয়ের ১৪২ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিপাকে পড়েছেন। চারপাশের ময়লা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে ব্যাঙ, পোকামাকড় এমন কি সাপ ঢোকার আশঙ্কাও আছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে প্রাক প্রাথমিকের (শিশু শ্রেণির) পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নার্গিস সুলতানা জানান, প্রধান শিক্ষক বিষয়টি অবহিত করেছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। সাধ্যের মধ্যে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকের দাবি, অবিলম্বে বিদ্যালয়ের যাতায়াত রাস্তা ও খেলার মাঠ ভরাট করে উঁচু না করলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ আরও ব্যাহত হবে।