ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫ - ৩:২৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন

  • আপডেট: Friday, September 19, 2025 - 10:20 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এবার কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম। তিনি আসন্ন হল সংসদ নির্বাচনে হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী।

শুক্রবার বিকাল ৫টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন তিনি। পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান।

আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা অফিসারের সন্তানেরা মাত্র ৩৫-৪০ মার্ক পেয়ে ভালো বিভাগে পড়াশোনা করছে৷ সেখানে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান বেষম্যের শিকার হয়। এই কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমি কাফনের কাপড় নিয়ে অনশনে বসেছি কারণ, যেই কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এত রক্ত ঝরেছে, সেই মীমাংসিত কোটাকে প্রশাসন কেন আবার বৈধতা দিলো। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর সুষ্ঠু সমাধান হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে ১৭ বছরের স্বৈরশাসককে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি, সেখানে রাবির শিক্ষকদের সিন্ডিকেট ও আমরা ভাঙতে পারব। আমি সব শিক্ষার্থী ভাই-বোনকে আহ্বান করব যে আমার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা একই কাতারে অনশনে বসে যেত।’

আসাদুল আরও বলেন, ‘আমি যখন ২০২১ সালে অ্যাডমিশন পরীক্ষা দেই, তখন আমার নম্বর ছিল ৬৮ দশমিক ৫। এই নম্বর নিয়ে আমি সংস্কৃতি বিভাগে পড়াশোনা করছি, কিন্তু আমার সঙ্গে একই সেশনে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম পাস নম্বর নিয়ে আইন, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ ভালো ভালো বিভাগে পড়াশোনা করছে। আমি চাই প্রশাসন শিগগিরই এই পোষ্যকোটা নামক বিষফোঁড়া সমূলে উৎখাত করবে।’

এদিকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবারও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুম’আর নামাজ শেষে রাবি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শহিদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন’, ‘ভিক্ষা কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন’, ‘ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা নে পোষ্য কোটার কবর দে’, আলি রায়হান মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, প্রভৃতি স্লোগান দেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘পোষ্য কোটা একটা মীমাংসিত ইস্যু। যাকে কোনো ভাবেই ফিরিয়ে আনা চলবে না। আমরা রক্ত দেবো, কিন্তু এই ক্যাম্পাসে পোষ্য কোটা ফিরতে দিবো না। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ক্যাম্পাসে যখন রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে, সেই সময়ে এসে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র কখনো বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না।’

এর আগে গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা থাকবে না বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আমি ১ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখারও পক্ষে নই। আমি অঙ্গীকার করছি, এই পোষ্য কোটা রাখা হবে না। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বাতিল ঘোষণা করা হবে।’

এরপর পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। সর্বশেষ গত বুধবার পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। দাবি না মানলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তৎক্ষণাত প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে প্রায় ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুক্রবার বাদ জুম’আ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।