ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ - ৩:০৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ফলোআপ: দুর্গাপুরে সালিশ বৈঠকে সেই গ্রাম্য মাতব্বরের অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি

  • আপডেট: Wednesday, September 17, 2025 - 11:17 pm

দুর্গাপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুরে দলছুট তিনটি শূকর বিক্রির টাকায় ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠা সেই গ্রাম্য মাতব্বর আকতার হোসেন ওরফে ভোলা এবার তৃতীয় দফা সালিশ বৈঠকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এর আগে প্রথম দফা গ্রাম্য মাতব্বর ভোলা নিজেকে প্রমাণ করতে না পারায় সালিশ বৈঠকে দোষী সাব্যস্ত হোন।

পরে তার নিজ সমাজে সালিশ ডেকে তাকে একঘরে করে রাখার আলটিমেটাম দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় উপজেলার শিবপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লায় আবারও সালিস বৈঠক বসে। শেষ হয় রাত সাড়ে ১০ টায়। তিনি শূকর বিক্রির টাকা খাননি এর সাক্ষী দিয়েছেন আদিবাসী দুই পরিবার।

সালিশ বৈঠকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় দফা সালিশ বৈঠকে হাজির করা হয় রাজশাহীর জেলার তানোর উপজেলা শুন্ডুমালার আদিবাসী শিমুল ও কর্নেলকে। তারা এক সময় এই মহল্লায় ভোলার আমবাগানে থাকতেন। তারা ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। তাদের সাক্ষ্যমতে শূকর বিক্রির টাকার টাকা ভাগ খাননি ভোলা। ফলে তাকে সালিস বৈঠকে নির্দোষ ঘোর্ষনা করা হয়ে।

তবে ভোলা সমাজের কাউকে জানিয়ে তিনি একাই শূকর বিক্রি করার অভিযোগে সালিশ করার অপরাধে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই মহল্লার মাতব্বর আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, মহল্লার ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে আদিবাসী শিমুল ও কর্নেল সাক্ষ্য দিয়েছেন। ভোলা শূকর বিক্রির টাকা নেননি। তাই তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মহল্লার কাউকে জানিয়ে একাই শূকর বিক্রির সালিশ করে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোলা।

এ অপরাধে সালিশে তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও জরিমানার ২শ টাকা রেখে তেল ও ভাড়াবাদ রেখে দেয়ায় ইসলামী শরীয়ত কী বলে, আলেম ওলামাদের ফতুয়া অনুযায়ী তার বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ঘটনার সূত্রপাত: ২০২৩ সালে একটি শূকরের পাল এ গ্রামে আসে। এর মধ্যে একটি মা শূকর দুটি বাচ্চাসহ দলছুট হয়ে গ্রামে থেকে যায়। পরে ভোলার বসতভিটায় আশ্রিত আদিবাসী শিমুলসহ তিন ব্যক্তি শূকরগুলো ধরে বিক্রি করেন। বিক্রির সঙ্গে ভোলাও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে সিরাজগঞ্জ থেকে শূকর পাল দলের সদস্যরা শিবপুরে আসেন।

তখন ভোলাই সালিশ করেন এবং ৮ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা সিরাজগঞ্জের শূকর মালিকদের দেয়া হয়। মাস দেড়েক আগে আবারও ওই ঘটনা সামনে আসে। একই এলাকার ভ্যানচালক এনতাজ আলী জনসমক্ষে ভোলাকে “খবিশ” (শূকর) বিক্রির টাকা খাওয়ার লোক বলে অভিযোগ তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভোলা নিজেই এনতাজের সমাজের মাতব্বর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর সমাজের মাতব্বর আব্দুল কাদের সালিশ ডাকেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের তিন গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ বৈঠকে উপস্থিত হন। বৈঠকে ভোলা শূকর বিক্রির টাকার ভাগ নেননি, তা প্রমাণে ব্যর্থ হন।

ফলে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এবার ভোলার নিজ সমাজের লোকজনও সালিশ ডাকেন। সেখানে তাঁকে চার দিনের সময় দেয়া হয়। মহল্লার গ্রাম্য মাতব্বর আকতার হোসেন ভোলার ভাষ্যমতে, দুই বছর আগে দুটি বাচ্চাসহ একটি মা শূকর দলছুট হয়েছিল। সেগুলো তার আশ্রিত আদিবাসীরা বিক্রি করে। পরে তিনি নিজেই সালিশ করে। ৮ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন ভোলা।

এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা মালিকপক্ষকে দেয়, ২শ টাকা তেল-ভাড়ার খরচ নিজে রাখে, আর বাকি ২ হাজার ৮শ টাকা ওই তিন আদিবাসী পরিবারকে দেয়। জানতে চাইলে এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে রাতেই আমি মহল্লায় গ্রাম মাতব্বরদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ডেকেছি। এ বিষয়ে ওই এলাকায় সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।