দুর্গাপুরে তুচ্ছ অভিযোগে গ্রাম্য মাতব্বর অবরুদ্ধ, একঘরে করার আলটিমেটাম

দুর্গাপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় দলছুট তিনটি শূকর বিক্রির টাকায় ভাগ বসানোর অভিযোগে এক গ্রাম্য মাতব্বরকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে দুই দফা সালিস বৈঠক হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় তৃতীয় দফায় আরেকটি সালিস বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই বৈঠকে অভিযুক্ত মাতব্বর আকতার হোসেন ওরফে ভোলাকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি শূকর বিক্রির টাকার ভাগ খাননি। তা প্রমাণ করতে না পারলে তাঁকে একঘরে করে রাখার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ ওঠা আকতার হোসেন ওরফে ভোলা দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন শিবপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভোলার বাড়ির সামনে শানবাঁধানো পাকা সিঁড়িতে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। তিনি জানান, ভোলা বাড়িতে নেই। সোমবার তিনি তানোরের মণ্ডুমালা এলাকায় গিয়েছিলেন আদিবাসী পরিবারের খোঁজে। আজ ফেরার কথা। রাতে সালিস বৈঠক বসবে, সেখানে শূকর বিক্রি করা তিনটি পরিবারকে হাজির করতে হবে।
ভোলার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী ওই টাকার ভাগ খাননি, এটা প্রমাণ করতেই হবে। নইলে তাঁকে একঘরে করে রাখবে। সমাজের মসজিদে নামাজ পড়তেও দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছে কয়েকজন মাতব্বর। কয়েক দিন ধরে আমরা কোথাও বের হতে পারছি না। সবাই বলে, খবিশ (শূকর) বিক্রির টাকা খেয়েছি আমরা।
ঘটনার সূত্রপাত: স্থানীয়রা জানান, শিবপুর দক্ষিণপাড়ার ছোট্ট একটি মহল্লায় চারটি সমাজ রয়েছে। এর মধ্যে ভোলা নিজেই এক সমাজের মাতব্বর। প্রায় তিন বছর আগে ভোলা তাঁর বসতভিটার আমবাগানে কয়েকটি আদিবাসী পরিবারকে আশ্রয় দেন। ওই পরিবারগুলো গ্রামের লোকজনের বাড়িতে কাজ করতেন। ২০২৩ সালে একটি শূকরের পাল এ গ্রামে আসে। এর মধ্যে একটি মা শূকর দুটি বাচ্চাসহ দলছুট হয়ে গ্রামে থেকে যায়।
পরে ভোলার বসতভিটায় আশ্রিত আদিবাসী শিমুলসহ তিন ব্যক্তি শূকরগুলো ধরে বিক্রি করেন। বিক্রির সঙ্গে ভোলাও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে সিরাজগঞ্জ থেকে শূকর পাল দলের সদস্যরা শিবপুরে আসেন। তখন ভোলাই সালিস করেন এবং ৮ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা সিরাজগঞ্জের শূকর মালিকদের দেওয়া হয়।
মহল্লার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, মাস দেড়েক আগে আবারও ওই ঘটনা সামনে আসে। একই এলাকার ভ্যানচালক এনতাজ আলী জনসমক্ষে ভোলাকে “খবিশ” (শূকর) বিক্রির টাকা খাওয়ার লোক বলে অভিযোগ তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভোলা নিজেই এনতাজের সমাজের মাতব্বর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এরপর সমাজের মাতব্বর আব্দুল কাদের সালিস ডাকেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের তিন গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ বৈঠকে উপস্থিত হন। বৈঠকে ভোলা শূকর বিক্রির টাকার ভাগ নেননি, তা প্রমাণে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এবার ভোলার নিজ সমাজের লোকজনও সালিস ডাকেন। সেখানে তাঁকে চার দিনের সময় দেওয়া হয়। আজ সেই চূড়ান্ত সালিস বসবে। জানতে চাইলে আকতার হোসেন ওরফে ভোলা বলেন, আমি এখন তানোর উপজেলায় গেছি, যারা শূকর বিক্রি করেছিল তাদের আনতে।
এর আগে আমি আমার সমাজে চার দিনের সময় চেয়েছিলাম। আজ শেষ দিন, সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি নিজেও সমাজের মাতব্বর। প্রায় দুই বছর আগে দুটি বাচ্চাসহ একটি মা শূকর দলছুট হয়েছিল। সেগুলো আমার আশ্রিত আদিবাসীরা বিক্রি করে। পরে আমি নিজেই সালিস করি। ৮ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করি। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা মালিকপক্ষকে দিই, ২০০ টাকা তেল-ভাড়ার খরচ রাখি, আর বাকি ২ হাজার ৮০০ টাকা ওই তিন পরিবারকে দিই।
ভ্যানচালক এনতাজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। শিবপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মাতব্বর আব্দুল কাদের বলেন, আমি একা মাতব্বর নই, আরও কয়েকজন আছেন। আজ রাত ৮টার পর ভোলাকে সালিসে ডাকা হয়েছে। সেখানে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি শূকরের টাকার ভাগ খাননি। প্রমাণে ব্যর্থ হলে সামাজিক রীতি অনুযায়ী তাঁকে একঘরে করে রাখা হবে। এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা শুনিনি। কেউ অভিযোগও করেননি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।