ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ - ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বাঘায় কাঁচা মরিচের গরম হাওয়ায় খুশি কৃষক, দিশেহারা ভোক্তা

  • আপডেট: Monday, September 15, 2025 - 10:48 pm

লালন উদ্দীন, বাঘা থেকে: বাঘা ও আড়ানী বাজারে কাঁচা মরিচের দাম আক্ষরিক অর্থেই ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ করেছে। উপজেলা শহরের বেশ কয়েকটা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এ অবস্থায় সাধারণ ক্রেতারা যেমন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন, তেমনি খুশি চাষিরা।

উপজেলার শহরের বাঘা বাজার, আড়ানী বাজার, নারায়নপুর বাজার, মনিগ্রাম বাজার, বিনোদতপুর বাজার, পানিকুমড়া বাজার, চন্ডিপুর বাজার, জোতরাঘব বাজার, বাউসা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে মরিচ কিনতে এসে ক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এক কেজি কাঁচা মরিচ যেখানে এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, সেখানে হঠাৎ করেই তিনগুণেরও বেশি দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব-অসচ্ছল মানুষ প্রায় মরিচ কেনাই বাদ দিয়েছেন।

স্থানীয় ক্রেতা ব্যাংক কর্মকর্তা সংকর সাহা জানান, প্রতিদিনের রান্নায় কাঁচা মরিচ অপরিহার্য। কিন্তু ২০০ টাকার ওপরে দাম উঠায় এখন আর আগের মতো কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাত-তরকারি ছাড়া চলে যায়, কিন্তু মরিচ ছাড়া খাওয়া যায় না। অথচ আজ মরিচ কিনতেই পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও চড়া দামে বিক্রি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ী আতাউল ইসলাম আতা বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মরিচ গাছের ফুল ঝরে গেছে। ফলে মাঠে উৎপাদন কমেছে। আবার সংরক্ষণ ক্ষমতা সীমিত থাকায় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণেই বাজারে এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন কম হলেও তারা বর্তমানে ভালো দাম পাচ্ছেন। মাত্র দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিল কৃষক আবু আফজাল। তিনি আগে যেখানে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, এখন পাইকারি বাজারেই ১৮০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ এসেছে। মরিচ একটি সংবেদনশীল ফসল। সামান্য আবহাওয়ার তারতম্যে ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে নতুন মরিচ শিগগির বাজারে আসবে।

তাতে দামের কিছুটা স্থিতিশীলতা আসবে বলে কৃষক মোমিন আশ্বন্ত করেন। বাঘা উপজেলা জেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মরিচের উৎপাদন কমেছে। তবে কৃষকরা নতুন করে আবাদ শুরু করেছেন। এক মাসের মধ্যে বাজারে পর্যাপ্ত মরিচ আসবে এবং দাম কমতে শুরু করবে।

এদিকে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার জানান, বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরবরাহ ঘাটতির সুযোগ নিয়ে যাতে কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়াতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাঘা বাজার আড়ানী বাজারে এখন কাঁচা মরিচ নিয়ে চলছে ‘গরম হাওয়া’।

মরিচের ডাবল সেঞ্চুরিতে ক্রেতারা দিশেহারা হলেও কৃষকরা পাচ্ছেন খানিকটা স্বস্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে ও সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলেই এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব। বাঘাবাসীর প্রত্যাশা খুব শিগগিরই কাঁচা মরিচের দাম ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ থেকে নেমে এসে সাধারণ মানুষের নাগালে ফিরবে।