ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫ - ৩:৪৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

  • আপডেট: Thursday, September 11, 2025 - 10:53 pm

রাজশাহীসহ দেশজুড়ে ছয়জনের মৃত্যু:

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজশাহীতেও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা। সম্প্রতি এক জরিপে রাজশাহী নগরীর ৫৭ ভাগ বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাশিদা পারভীন হ্যাপি (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বুধবার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এনিয়ে সবমিলে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৬ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনজন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একজন এবং ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০৯ জনসহ চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৪৫ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ নারী।

রাজশাহীতে মারা যাওয়া নারী রাশিদা পারভীন হ্যাপি রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ডান পেট ও শরীরে ব্যথা নিয়ে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন হ্যাপি। তিনি তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার ৪টায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্তমানে হাসপাতালে এক শিশুসহ ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। তারা সবাই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন রাজশাহী, ছয় জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, তিন জন নাটোর, একজন নওগাঁ, একজন চুয়াডাঙ্গা, একজন কুষ্টিয়া ও একজন মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা। রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৯৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সাতজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

অন্যদিকে, সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিসের দেয়া তথ্যমতে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগে, বর্ষা মৌসুম ও শেষে এই তিন দফায় ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ করা হয়। এ বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে জরিপ করে রাজশাহী নগরীতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। তবে এর তিন মাস পর জুলাই মাসে পরীক্ষা করে নগরীতে ৫৭ দশমিক ৩৩ ভাগ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে ভরা মৌসুমে লার্ভার উপস্থিতি ছিল ৪৫ দশমিক ৩৩ ভাগ বাড়িতে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের কীটতত্ত্ব টেকনিশিয়ান আব্দুল বারী বলেন, আমরা জুলাই মাসে পাঁচটা ওয়ার্ডের ৭৫টি বাড়িতে পরীক্ষা করেছি। সেখানে ৩২টি বাড়ির ৪৩টি পাত্রে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। আমাদের এখানে কাজের ফল হচ্ছে ৫৭ দশমিক ৩৩ ভাগ বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে বলা আছে, ২০ ভাগের বেশি এলাকায় এডিসের উপস্থিতি থাকলে সেই এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। সে অবস্থায় আমরা বলতে পারি রাজশাহীতে আমরা ভয়াবহ অবস্থায় আছি।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের জেলা কীটতত্ত্ববিদ উম্মে হাবিবা বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পাঁচটা ওয়ার্ডে আমরা কাজ করেছি। ৭৫টি বাড়িতে পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছি, বাড়ির আশপাশে অনেক কনটেইনার, ফুলের টব, ডাবের খোলা, ছাদবাগানের বিভিন্ন টব, দইয়ের খোলা হাঁড়ি, খেলনা হাঁড়িপাতিল। এগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এ পরীক্ষার ফল সিটি করপোরেশনকে পাঠিয়েছি। সেই সঙ্গে তাদের সুপারিশও করেছি। যাতে তাদের এসব ধ্বংস করতে বা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুবিধা হয়। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরো নগরীতেই ডেঙ্গুর লার্ভা ছড়িয়ে আছে এমন ভাবনা নিয়েই কাজ করছে তারা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশন এলাকায় পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫৭ শতাংশ এডিস মশা আছে দেখেছে। আমি এটা ভালো দিক বলব যে, আমাদের গোটা সিটি করপোরেশনে সমস্যা। শুধু ৫৭ শতাংশ আছে এমনটি নয়, আমরা মনে করি গোটা রাজশাহী করপোরেশনে এডিস মশা আছে। সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস