পুঠিয়ায় গর্ভের বাচ্চাসহ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি, রাণীনগরেও রোগাক্রান্ত গরু জবাই

পুঠিয়া ও রাণীনগর প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বরে কসাই পট্টিতে গর্ভে বাচ্চাসহ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে রিয়াজুল ইসলাম নামে এক কসাই এর বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা। এরপর থেকে কসাই রিয়াজুল পলাতক রয়েছেন।
অন্যদিকে, নওগাঁর রাণীনগরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রি করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাবিলা ইয়াসমিন মাংস বিক্রেতা বিদ্যুৎ হোসেনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
পুঠিয়া প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বানেশ্বর বাজারে এই ঘটনা ঘটে। ওই গাভিটি জবাই করার আগে বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক নিযুক্ত চৌকিদার এসে সিলও মেরে যায়। বাজারে উপস্থিত লোকজন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রিয়াজুল কসাই একটি গাভি জবাই করে মাংস বিক্রি করা শুরু করে।
এসময় রিয়াজুলের কর্মচারী রাজু বাছুরটি লুকানোর চেষ্টা করে। তখন বাজার করতে আসা এক ব্যক্তির চোখে পড়ে। ঘটনাটি জানাজানি হলে রিয়াজুল কসাই পালিয়ে যায়। বাজার করতে আসা লোকজনের অভিযোগ এই রিয়াজুল এর আগেও মরা ও অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করেছিল। কিন্তু হাটের প্রভাবশালী লোকজনদের টাকা দিয়ে সে সবকিছু ম্যানেজ করে নেয়। বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক দুলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান মতি জানান, প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন এসেছিল। কসাই রিয়াজুলের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে বাকি মাংসগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। রিয়াজুল কসাই পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিবু দাস সুমিত জানান, ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সবকিছু শুনেছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর রাণীনগরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রয় করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাবিলা ইয়াসমিন মাংস বিক্রেতা বিদ্যুৎ হোসেনের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে কসাই জহুরুল ইসলাম পালিয়ে যায়। জানা গেছে, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী ব্রীজের মোড় নামক স্থানে ভবাণীপুর গ্রামের মোসারফ সরদারের ছেলে জহুরুল ইসলাম ও আতাইকুলা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন যৌথভাবে বেশ কিছু দিন ধরে ওই স্থানে গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করতো।
বৃহস্পতিবার বিকালে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ডাক্তারি ছাড়পত্র ছাড়াই রোগাক্রান্ত একটি গরু জবাই করে ৫৫০ টাকা কেজিতে মাইকে প্রচারের মাধ্যমে মাংস বিক্রি শুরু করে। কমদামে মাংস পাওয়ায় ক্রেতারাও হুমরি খেয়ে পরে। সংবাদ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাবিলা ইয়াসমিন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত ডা. রফি ফয়সাল তালুকদার ও ভেটেনারি সার্জন ডাঃ মিশকাতুল জাবিদ যৌথ ভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির সাথে জড়িত বিদ্যুৎ হোসেনকে আটক করে।
ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তার ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে ওই গরুর অবশিষ্ট মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে যে সমস্ত ক্রেতারা মাংস কিনেছিলো সেই মাংস ফেরত দিতে ভির জমায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফি ফয়সাল তালুকদার বলেন, গোপন সংবাদে জানতে পারি বেতগাড়ী ব্রীজের মোড়ে কসাই জহুরুল ও বিদ্যুৎ যৌথ ভাবে আমাদের ছাড়পত্র ছাড়াই রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে মাইকে প্রচারের মাধ্যমে মাংস বিক্রি করছে।
এমন খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাবিলা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে আমরা অভিযানে যাই। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কসাই বিদ্যুতের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসময় হাতেনাতে পাওয়া মাংসগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অপর কসাই জহুরুল ইসলাম পালিয়ে যায়। এমন অভিযান আগামীতে আরও জোরালোভাবে চলমান থাকবে।