ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫ - ৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

যে গ্রামের জেলেরা মাছ ধরেন হেলমেট পড়ে

  • আপডেট: Wednesday, September 10, 2025 - 10:34 pm

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: জেলে কবিরুল হক (২৮)। কানে কম শুনেন এখন। তার অভিযোগ, দীঘিতে মাছ ধরার সময় তাকে মাছে মেরে ছিলেন। মাছও মানুষকে মারে এমন অভিযোগ শুনতে গল্পের মতো হলেও বাস্তবে তা পুরোই সত্য। কবিরুল জানালেন, বছর তিনেক আগে মাছ ধরার সময় প্রায় ১২ থেকে ১৪ কেজির ওজনের একটি রই মাছ তার কান বরাবরে আঘাত করেন। এরপর পুকুরে পানিতেই জ্ঞাণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে সহপাঠি জেলেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নেন। কানে প্রচন্ড আঘাতে কবিরুল এখন কানে কম শুনেন। এরপর থেকেই কবিরুল ক্রিকেট হেলমেট ছাড়া পুকুরেই নামেন না।

শুধু জেলে কবিরুল নয়, মাছচাষে দেশের অন্যতম রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার এসএস মৎস্য ফার্ম (মাছের খামার) রয়েছে এ যেন এক ভিন্ন এক গল্প। সেখানে কোন জেলেই মাথায় ক্রিকেট হেলমেট ছাড়া মাছ ধরতে নামেন না। জালে ধরা পড়া মাছগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে প্রচন্ড শক্তি প্রদর্শন করেন। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে নিজেদের সুরক্ষা রাখতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন জেলেরা। গতকাল বুধবার সকালে এমন চিত্র সরেজিমেন দেখতে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের যুগিশো গ্রামে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ৫ হাজার বিঘা জমির ওপর ১৮০টি পুকুর নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসএস মৎস্য ফার্ম (মাছের খামার)। সেখানে প্রত্যেক জেলেরা মাথায় ক্রিকেট খেলার হেলমেট পরে মাছ ধরছেন। জানা গেল, এই ফার্মের মালিক দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বণপদক প্রাপ্ত মৎস্যচাষি গোলাম সাকলায়েন। এই ফার্ম থেকে প্রতিদিন ৫হাজার কেজি বিভিন্ন জাতের তাজা মাছ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। মাছগুলোর একেকটির ওজন ৫ থেকে ২০ কেজির মধ্যে।

পুকুরে হেলমেট দিয়ে মাছ ধরছিলেন রহিদুল ইসলাম নামের এক জেলে। তিনি বলেন, মাছে মারে রে ভাই, কী করব। মাইর থেকে তোহ বাঁচতে হবে। তাই মাথায় হেলমেট পরছি। জাল টেনে মাছ যখন ওপরে আনা হয়। তখন মাছেরা প্রচন্ড গতিতে শক্তি প্রদর্শণ করেন। আগে হেলমেট পরতাম না। মাছের আঘাতে আমার একটি দাঁত ভেঙে গেছে। এরপর আমাদের ফার্মের মালিক আমাদের হেলমেট কিনে দিয়েছেন। পুকুরের ওপরে দাড়িয়ে মাছধরা পর্যাবেক্ষণ করছিলেন এসএস মৎস্য ফার্মের ম্যানেজার আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, এই ফার্মটি ৩০ বছর পুরানো। এই ফার্ম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। এই ফার্মে ১২০জন জেলে ও কর্মচারী আছেন। গত ৩ বছর ধরে আমরা বড় মাছ চাষ করছি। বড় মাছ ধরার সময় আমাদের জেলেরা আহত হয়। অনেকের চোখে-মুখে ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। এমনকি দাঁতও ভেঙেছে। যার কারণে আমরা হেলমেট ব্যবহার শুরু করেছি।

এ বিষয়ে এসএস মৎস্য ফার্মের মালিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন বলেন, প্রোয় ২০ বছর আগে মাছ ধরার সময় একটি রুই মাছ আমার নাকের ওপর আঘাত করেছিল। অনেক রক্তপাত হয়েছিল। এছাড়াও আমার এক কর্মচারী মাছ ধরতে গিয়ে বুকে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর মাছের আঘাত থেকে কিভাবে সুরক্ষা পাওয়া যায়, তা চিন্তাভাবনা করে আমরা কর্মচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্রিকেট হেলমেট ব্যবহার শুরু করি। দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, ভরপানির পুকুর থেকে মাছ যখন ওপরে উঠে তখন তারা অধিক শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে। বড় মাছের একটি আঘাত, বড় দুর্ঘটনার আশষ্কা রয়েছে। এজন্য জেলেরা নিজের সুরক্ষায় হেলমেট পরে।