ব্যক্তির বিচার নয়, আমরা অপরাধের বিচার করতে চাই: অ্যাটর্নি জেনারেল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির বিচার চান। আপনাদের সাথে একমত হয়ে আমি বলতে চাই, আমরা ব্যক্তি নয় বরং অপরাধের বিচার করতে চাই। অপরাধের সাথে যারা সম্পৃক্ত হবে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা-২০২৫’ এর রাজশাহী পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধান নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন। নাগরিক হিসেবে আমি চাই নিঃশঙ্ক চিত্তে বাংলাদেশে বসবাস করতে। আমি চাই ন্যায়বিচার, জীবনের অধিকার, কথা বলার অধিকার, লিখতে পারার অধিকারসহ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। পক্ষপাতিত্ব নয়, সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পেতে চাই যেখানে কোনো স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না। সেজন্য সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্ন আসে।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের একটি লক্ষ্য ছিল, আমরা স্বৈরাচার হটিয়ে বাংলাদেশকে জনগণের বাংলাদেশে রূপান্তর করব। আজ নানা জনের নানা মত লক্ষ্য করছি। সংস্কারের নামে বিভিন্ন প্রস্তাবনা পাওয়া যাচ্ছে। শুধু নিজের প্রস্তাবই সঠিক ভেবে অন্যের প্রস্তাবকে আমরা যেন উপেক্ষা না করি সেটাও ভাবতে হবে। তা না হলে জুলাই চেতনা, সাংবিধানিক ভাবনা ভুলুণ্ঠিত হবে।
তারুণ্যের স্বপ্ন দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন রাইট টু ইনফরমেশন সংবিধানের অংশ হওয়া উচিত। আমি একমত, তবে কীভাবে হবে তা নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে জুলাই শহিদের রক্তের সাথে কেউ বেঈমানী করতে পারবে না। সাংবিধানিক ভাবে আমরা এমন একটা যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছাতে চাই যেখানে প্রতিটি শহিদের রক্তের মর্যাদা রক্ষিত হবে। এসময় রাজনৈতিক সমঝোতার পথ-পরিক্রমায় একটি আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হক, উপ-উপাচার্য ড. ফরিদ উদ্দিন খান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, বিচারকমণ্ডলী, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মী।
প্রতিযোগিতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাক্সক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ সময়োপযোগী, দূরদর্শী এবং কার্যকর নীতি প্রস্তাবে তিন সদস্যবিশিষ্ট ৫টি দল অংশগ্রহণ করে। গতকালকের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী দলের নাম ছিল ‘টর্চলাইট’। প্রথম রানারআপ হয়েছে ‘দীপশিখা’ এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে ‘চেঞ্জমেকার’ দল। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের হাতে পদক, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের চেক তুলে দেন।
এদিকে বিকালে রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আইনজীবীদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় শোনেন এবং পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন তিনি।
তিনি বলেন সরকারিভাবে আইনজীবীদের জন্য উন্নতমানের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা এবং সকল সুযোগ-সুবিধার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন দুর্নীতি করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না, দেয়া হবে কঠোর শাস্তি। তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে বৃথা যেতে দেয়া হবে না। একটি সাংবিধানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে। যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার। ৭১ বা জুলাই ২৪ সংঘর্ষিক নয়। ৭১ এর ধারাবাহিকতায় ২৪ এসেছে। খুন-গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তির পাশাপাশি অপরাধেরও বিচার হবে।
অ্যাডভোকেট ইমতিয়ার মাসরুর আল আমীনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহানগর বিএনপি অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সদস্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও জিপি জেলা জজ আদালত, রাজশাহী মাইনুল আহসান পান্না, পিপি জেলা ও দায়রা জজ আদালত রইসুল ইসলাম, বিজ্ঞ পিপি মহানগর দায়রা জজ আদালত আলী আশরাফ মাসুম, সাবেক আহবায়ক রাজশাহী মহানগর বিএনপি অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা প্রমুখ ।