৩০ বছর ধরে দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি:
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হওয়া সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কয়েক হাজার মানুষকে এখনো কাঁদামাটির রাস্তাতেই চলাচল করতে হয়। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই রাস্তায় জমে হাঁটু পানি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে টয়েলেটের পানি মিশে একাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ।
এতে ডায়রিয়া, আমাশয় ও অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে এলাকার শিশু-কিশোররা। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মিরপুর ওয়াপদা বাঁধের পশ্চিমে রেলেকুঠি থেকে চর রায়পুর রেলেকুঠি পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ মিটার রাস্তায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় তিনটি মহল্লার মানুষকে।
জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে যমুনার ভাঙন কবলিত চার/পাঁচটি গ্রামের মানুষ পাট মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন রেলেকুঠির এই ১০ একর জায়গায় বসতি গড়ে তোলেন। আর নিজেদের চলাচলের সুবিধার্থে এই কাঁচা রাস্তাটি তৈরি করে। ২০০৩-০৪ সালে এই জমি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করতে পৌরসভার মাধ্যমে শতক প্রতি ১০ হাজার করে টাকা দেন বাসিন্দারা।
কিন্তু ২২ বছরেও জমির মালিকানা তাদের বুঝিয়ে দেয়নি পৌরসভা। এমনকি চলাচলের রাস্তাটি ৩০ বছরেও পাকা করা হয়নি। সড়কটির দুপাশ দিয়ে চার শতাধিক পরিবার বাস করে। আর এ রুটে চলাচল করে মাহমুদপুর, রায়পুর ও চর রায়পুর, মহল্লার কয়েক হাজার মানুষ।
পানি নিষ্কাশনের উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো রাস্তা তলিয়ে যায়। ডুবে যায় রাস্তার পাশের বাড়িগুলোও। বৃষ্টি শেষ হলে কাঁদায় পূর্ণ থাকে সড়কটি। রিকশা-অটোরিকশা এমনকি পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর।
স্থানীয়রা জানান, এ রাস্তা দিয়ে তিনটি ওয়ার্ডের তিনটি মহল্লার বাসিন্দারা মিরপুর বাজার, মিরপুর বাসস্ট্যান্ড, মসজিদ, মাদরাসা ও মিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। কাঁচা রাস্তা হওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমেও এখান দিয়ে যানবাহন চলতে পারে না। আর বৃষ্টি হলে তো পায়ে হেঁটেও চলা যায় না।
অবিলম্বে এই রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করে অবহেলিত অঞ্চলটির নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। বাচ্চারা ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায়। মানুষজন চলতেই পারে না। ট্রাকচালক নাজমুল শেখ বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা এমন দুর্ভোগের মধ্যে আছি।
আমাদের মনে হয় না আমরা সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের মনে হয় চরাঞ্চলের কোনো এক জায়গায় আমরা বসবাস করছি। ওষুধ ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, এই রাস্তা দিয়ে পাঁচ/সাত গ্রামের লোকজন চলাচল করে। ৩০ বছর ধরে এই অবস্থায় আছে।
বৃষ্টি নামলে এখানে হাঁটু পানি জমে যায়। মসজিদে যেতে নোংরা পানি মাড়িয়ে যেতে হয়। এখানে ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা কিছুই করে না। এই রাস্তায় একটা ইট, বালুও ফেলে না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি অবিলম্বে রাস্তাটা পাকা করা হোক।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আস্তাহার আলী বলেন, যমুনার ভাঙনে বিয়ারাঘাট, মোড়গ্রাম, চাকলাপাড়া, ঘোনাপাড়া যখন ভেঙে যায়, তখন ভাঙন কবলিত নিঃস্ব মানুষগুলো এখানে এসে আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে এদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই রাস্তায় বৃষ্টি নামলেই পায়খানার ময়লার পানি সব এক জায়গায় হয়ে যায়।
এ কারণে এখানকার শিশুরা অপুষ্টিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। আমাদের দুঃখ দেখার মতো কেউ নাই। মুদি দোকানি মেনহাজ উদ্দিন ও নাজমুল আলম বলেন, আমাদের রাস্তাটি অবহেলিত হয়ে আছে। এই রাস্তায় কোনো মেয়র বা চেয়ারম্যান কাজ করে না।
বৃষ্টি নামলেই চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে। আমরা রোহিঙ্গাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরনবী সরকার বলেন, রেলেকুঠির রাস্তার বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। ওখানে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা দরকার। এ বিষয়ে আগামীতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজটা কীভাবে করা যায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।