ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ৪:০৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ভাইরাল পুরান ঢাকায় হত্যার পর লাশ ঘিরে প্রকাশ্যে উল্লাস করা দুই আসামি গ্রেপ্তার

  • আপডেট: Saturday, July 12, 2025 - 1:06 am

সোনালী ডেস্ক: পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কম্পাউন্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ। সেখানে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এরপর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে কম্পাউন্ডের বাইরের সড়কে এনে শত শত মানুষের সামনে চলে উন্মত্ততা।

ঘটনাস্থলের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহিন ও তারেক নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মহিন ঘটনার মূলহোতা। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।

শুক্রবার বিকেলে ডিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহিন ও তারেক নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় অদূরেই চলছিল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, নিরাপত্তায় ছিলেন আনসার ক্যাম্পের সদস্যরাও।

তবে এমন সন্ত্রাস আতঙ্কে কেউ এগিয়ে আসেনি। যখন তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়, তখন চিকিৎসক জানান, আগেই মারা গেছেন সোহাগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি সন্ত্রাসীরা। সোহাগের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও লাশের ওপর চলতে থাকে নৃশংসতা।

রক্তাক্ত নিথর দেহটি রাস্তার মাঝখানে ফেলে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে চলে ভয়াবহ উন্মত্ত উল্লাস। একজন নয়, একাধিক যুবক মৃত ব্যক্তির নাক-মুখে এবং বুকের ওপর আঘাত করে যেতে থাকে। ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা লোকদের মধ্যে একজন মোবাইলে কথা বলছিল।

ওই সময় দুই হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা সোহাগের রক্তাক্ত মুখের ওপর কিলঘুষি দিতে থাকে আরেকজন। অন্য এক তরুণ দৌড়ে এসে পড়ে থাকা নিথর দেহের বুকের ওপর লাফাচ্ছিল! মানুষজনও দেখছিল এমন ভয়ংকর দৃশ্য। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে পুরোনো বৈদ্যুতিক কেবল কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। তার দোকানের নাম সোহানা মেটাল।

ওই এলাকায় বিদ্যুতের তামার তার ও সাদা তারের ব্যবসার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগের কাছে। তবে নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে আরও দুজন। তারা অনেকটা ওই অবৈধ বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল।

তা না হলে নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তারা। এর জেরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বে ঘটে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ঘটনার দিন সোহাগকে তার দোকান থেকে ডেকে আনা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত সোহাগ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন, টিটুসহ জড়িত অন্যরাও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তবে সংগঠনে তাদের কোনো পদ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদারসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।