ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

পরিবহন খাতে আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি

  • আপডেট: Saturday, July 12, 2025 - 1:01 am

সোনালী ডেস্ক: দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি আগের মতোই চলছে। সরকার বদল হলেও চাঁদাবাজি পরিস্থিতির পরিবর্তন আসেনি। বরং কোথাও কোথাও তা আগের চেয়ে বেড়েছে। মূলত বিগত সরকারের পতনের পর পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ শুধু হাতবদল হয়েছে।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে প্রায় আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি। তাতে রীতিমতো অতিষ্ঠ বাস মালিক ও শ্রমিকরা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়কে বিশৃঙ্খলার পেছনে বড় কারণ চাঁদাবাজি। পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় ও দুর্ঘটনারও অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। কারণ ঢাকার রাস্তায় চলতে একটি বাসকে দৈনিক গড়ে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

আর ওই টাকা তুলতে বাসগুলোর বাড়তি ট্রিপ মারার প্রবণতায় পেয়ে বসে এবং তাতে দুর্ঘটনা বাড়ে। পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবহন খাত থেকে সিটি করপোরেশন, টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের ফি, কাউন্টার ও টার্মিনালের খরচ, শ্রমিক, লাইনম্যান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের ফি আদায়ের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নামে চাঁদাবাজিটা বেশি হয়। আবার তার একটা অংশ যায় পুলিশ প্রশাসনে। রাজধানীর চারটি আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটের টার্মিনালসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে চাঁদাবাজিতে বিপুল টাকা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর সায়দাবাদ, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মিরপুর, আজিমপুর, মতিঝিল-কমলাপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এবং ভাসমান মিলে গাড়ির সংখ্যা কয়েক হাজার।

ওসব গাড়ি রাস্তায় নামলে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হয়। বিশেষ করে মালিক সমিতি ও  শ্রমিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তারপর রয়েছে হেলপার, কন্ড্রাকটর, চালককে পরিচয়পত্র দেয়াসহ নানা অজুহাত। এককথায়  সড়কজুড়েই বিছানো চাঁদার জাল।

সূত্র জানায়, বিগত শাসক দলটির নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজির একটি ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। সেক্ষেত্রে তারা টোকেন ব্যবহার করতো। কিন্তু বিগত সরকারের পতনের পর ওই ব্যবস্থার দখল নেয় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের (গুলিস্তান- ফুলবাড়িয়া) কোনো বৈধ কমিটি নেই।

কিন্তু মালিক সমিতির নামে প্রতি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ৭০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া বাসের চালক, হেলপারও কন্ড্রাকটরকে পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য চাঁদা নিচ্ছে ৯০০ টাকা।  ওই টার্মিনাল থেকে ৩৬টি রুটে চলাচলরত দেড় হাজার  বাস থেকে চাঁদা তোলা হয়।

প্রতিদিন বাসপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া এই টার্মিনাল থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বাসপ্রতি আলাদাভাবে তোলা হয় চাঁদা। বর্তমানে রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, হিউম্যান হলার (লেগুনা) এবং অটোরিকশাসহ ৯৫ ধরনের টার্মিনাল এবং স্ট্যান্ড রয়েছে। তার মধ্যে ৬৬টি টার্মিনাল এবং স্ট্যান্ডই রাজধানীতে রয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে ৩৭টি লেগুনা স্ট্যান্ড, সাতটি স্থানীয় বাস স্ট্যান্ড, পাঁচটি পিকআপ স্ট্যান্ড, চারটি স্থানীয় এবং আন-ঃজেলা বাস স্ট্যান্ড, চারটি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, তিনটি আন-ঃজেলা বাস টার্মিনাল, তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, দুটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং একটি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড।

চাঁদাবাজরা রাজধানীর সকল দূরপাল্লার ও মাঝারি পাল্লার বাস, ট্রাক, পিকআপ এবং কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশা থেকেও চাঁদাবাজি করছে।

এদিকে এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আবুল কাশেম জানান, মালিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় বিষয়টি ইউনিয়নের এখতিয়ারভুক্ত নয়। বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নতুন কমিটির নির্বাচনের জন্য পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।

তবে তা ৩০০ টাকা না। কার্ডের (পরিচয়পত্র) খরচের জন্য কিছু টাকা নেয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

অন্যদিকে এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম জানান, প্রতি বাস থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা তোলা হয়। যা থেকে সিটি করপোরেশনের টোল বাবদ দিতে হয় ৬০ টাকা, শ্রমিক ফান্ডে ৩০ টাকা। তাছাড়া রয়েছে আনুষঙ্গিক  কিছু খরচ।