চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রতিরোধে নেই তেমন কার্যক্রম:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত ১১ জুন থেকে ১১ জুলই পর্যন্ত এক মাসে ৩৮৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুর আক্রান্ত সংখ্যা হচ্ছে ৮৯৭ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও জেলার ২ জন রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। আর এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সঙ্কটে হাসপাতালের মেঝেতেই শুয়ে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা। যদিও তাদের দাবি লোকবল সঙ্কট থাকলেও রোগীদের হাসপাতাল থেকেই সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা নিয়ে কোন ঘাটতি নেই।
অথচ স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও নবাবগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় এবং মশক নিধনে তেমন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়। আর এ নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছেন পৌরবাসী। অনেকেই আবার ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট এবং ডেঙ্গু না হওয়া সত্ত্বেও পজেটিভ রির্পোট দেয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন।
এমন অবস্থায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন-অর-রশীদ জানান, লোকবল সঙ্কটের মধ্যেই ডেঙ্গু নিধনে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আবার মশক নিধন অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিনই এলাকায় এলাকায় মশা নিধনে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, জেলায় এবার যখন প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়, তখন বৃষ্টি ছিল না। তাপপ্রবাহ চলছিল। এরপরেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুলতায় এমনটা হতে পারে।
কোরবানির ঈদের আগে থেকেই নবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পিটিআই বস্তি, মিস্ত্রিপাড়া, শিবতলা, উদয়সংঘ মোড়, সিএন্ডবি ঘাট, বালুবাগান, মসজিদপাড়া, আরামবাগ ও শান্তিমোড় এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালে আক্রান্ত সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গুরুত্বর রোগীদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু এখন জেলা সদরের বাইরেও উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। আর চলমান বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে, এসব রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ-সরঞ্জাম রয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। একমাত্র জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেই কমতে পারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। তাই এই সময়টাতে জেলাবাসীকে বাড়তি সচেতনতার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, ডেঙ্গু জ¦র দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করা হয়েছে।
সেখানে ডেঙ্গু’র প্রকোপ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং, শহরের ড্রেন, ঝোঁপ-ঝাড়, বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশ পরিস্কার করা, ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক হ্যান্ডবিল বিতরণ ও স্কাউটস্্ এবং রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক সতর্কতামূলক বার্তা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলাবাসীর সহযোগিতা চান তিনি।