কালো ধোঁয়া আর উৎকট গন্ধে বিপর্যস্ত জনজীবন

টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি:
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে টায়ার পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে জ্বালানি তেল (পেট্রল জাতীয়)। কৃষিজমিতে গড়ে তোলা এ কারখানার কালো ধোঁয়া আর উৎকট গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে গোটা এলাকার বাতাস; বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, আর হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের বাকাই গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যানবাহনের পুরনো টায়ার পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের জ্বালানি তেল। কিন্তু এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। বাতাসের সঙ্গে বিষাক্ত এ ধোঁয়া আর কালি মিশে পরত পড়ছে গাছে।
এতে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে মাছ, সেই সঙ্গে গাছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফুল ও ফল। স্থানীয়রা জানান, কারখানাটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা বাস, ট্রাক, সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের পুরনো টায়ার আগুনের তাপে গলিয়ে তৈরি করা হয় এ জ্বালানি তেল এবং কালি।
এর পাশাপাশি পোড়ানো টায়ারের ভেতর থেকে বের করা হয় লোহা তৈরির কাঁচামালও। তারা আরও জানান, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা টায়ার আগুনের তাপে গলানোর সময় এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া মিশে যাচ্ছে বাতাসে।
ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্যাস। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ওই কারখানাটিতে ৫ টন টায়ার পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় ১২০০ লিটার তেল, দেড় হাজার কেজি কার্বন বা কালি এবং এক হাজার কেজি লোহার কাঁচামাল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও কালি বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে গাছ ও পুকুরে। এতে একদিকে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে সব মাছ; অন্যদিকে গাছের ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। এছাড়া স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ।
পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনের কাছে এমন কারখানা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। এলাকার করিম মোল্লা জানান, ওখানে টায়ার পোড়ানোর কারণে চারদিকে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা আমার জমিতে কাজ করতে রাজি হন না। তাই বাধ্য হয়ে অল্প টাকায় জমি বর্গা দিয়ে দিয়েছি। তবে টায়ার পোড়ানোয় পরিবেশের ক্ষতির কথা অস্বীকার করেন কারখানায় নিয়োজিত টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম।
পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা এ প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্ত কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।