দেড় বছরেও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগীরা

গ্রাহকদের কোটি টাকা পোস্ট মাস্টারের পকেটে:
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ৫৫ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পোস্ট মাস্টার কর্তৃক আত্মসাৎ হওয়ার প্রমাণ সুস্পষ্ট হলেও এখনো সেই টাকা ফেরৎ পাননি ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা।
ঘটনা জানাজানির প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের জমানো টাকা ফেরৎ না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী তানোর পোস্ট অফিসের সামনে টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। এসময় তারা বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের জমানো টাকা ফেরৎ না দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গ্রাহকরা বলছেন, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মোখছেদ আলী গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা পোস্ট অফিসের সরকারি লেজারে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরেও সে টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক এবং রহস্যও বটে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মোখছেদ আলী প্রায় ৩ বছর ধরে ৫৫ জন গ্রাহকের সঞ্চয় পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেজার বইয়ে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। গত বছরের মার্চ মাসে বিষয়টি জনসম্মুখে এলে পোস্ট মাস্টার মোখছেদ আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন গ্রাহকরা।
এ ঘটনায় ওই সময় ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদন্তে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর পোস্ট মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
পরে রাজশাহী দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলাও দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও আর অফিসে আসছেন না। বর্তমান পোস্ট মাস্টারও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে তানোর সদর গ্রামের মৃত জামালের স্ত্রী সিরিনা বলেন, ৮ লাখ টাকা তানোর পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জমা রাখা ছিল। মেয়াদ শেষ হলেও সেই টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে তিনি জমানো টাকা ফেরৎ পেতে প্রশাসন ও পোস্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
তানোর সদর গ্রামে মৃত খোদাবক্স মেম্বারের ছেলে কুয়েত প্রবাসী মাসুদ রানা বলেন, আমার জমানো কষ্টের ২৬ লাখ টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না। তানোর গোল্লাপাড়া গ্রামের অশেষ মালাকারের স্ত্রী গৌরী সরকার বলেন, আমার ৩ লাখ টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না। তানোর সদর হিন্দুপাড়া গ্রামের মৃত সুরেন্দ্র নাথ পালের ছেলে হিরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, আমি ১০ বছর মেয়াদে ১০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম।
মেয়াদ শেষে আমার ১৩ লাখ টাকা পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী আত্মসাৎ করেছেন। কয়েল গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে মাসুদ রানা বলেন, আমার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না। তানোর উপজেলার শ্রী খন্ডা গ্রামের মহন লাল পালের ছেলে রাজ কুমার বলেন, আমার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তালন্দ গ্রামের মৃত শামসুদ্দীন মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
হরিদেবপুর গ্রামের সাধন সরকারের স্ত্রী মিনতি সরকার বলেন, আমার ৮ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে রেখেছিলাম। মেয়াদ শেষে হয়েছে, টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ওই সময় পোস্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দেয়ার আশ্বাস দেয়ার ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরৎ পাচ্ছি না। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের জমানো টাকা ফেরৎ না দেয়া হলে কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারী দেন তারা।
এ বিষয়ে তানোর পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল মালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বরখাস্ত হওয়ার আগের পোস্ট মাস্টার মোখছেদ আলী আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট মাস্টার ডেপুটি জেনারেল রাকিব বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় পোস্ট মাস্টার ডেপুটি জেনারেল রাকিব বিশ্বাসও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্তকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি মামলাও করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।