ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ২:২৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারের সুরাহা হতে হবে

  • আপডেট: Tuesday, July 8, 2025 - 12:29 am

রাজশাহী-নাটোরে জুলাই পদযাত্রা থেকে নাহিদ:

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্টে আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন। এবার আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের পুনর্গঠন। ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন।

এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন। আমরা গণভবন জয় করেছি, এবার আমরা জাতীয় সংসদ ভবনও জয় করব। কিন্তু তার আগে কথা আছে। নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার ও বিচারের সুরাহা হতে হবে।

গত রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে ও গতকাল সোমবার নাটোরে আয়োজিত পৃথক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ গড়তে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার ষষ্ঠ দিনে গত রোববার জুলাই পথযাত্রা শেষে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ও গতকাল সোমবার দুপুরে সপ্তম দিনে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ের স্বাধীনতা চত্বরে এই পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদকে হঠাতে সক্ষম হয়েছি। তবে শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেই হবে না। নতুন করে মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। দেশের মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

এই গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে রাষ্ট্র তাদেরকে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সংবিধানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ। আমরা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, কোনো ধরনের টালবাহানা মেনে নেব না। কোনো বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই। নাহিদ আরও বলেন, এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে হবে যেখানে গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে সমতা থাকবে, যেখানে ইসসাফ থাকবে।

একটি দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই নতুন প্রজন্মের ছাত্র জনতার আকাক্সক্ষা; কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিজয়ের পর থেকে নানা পক্ষ সেই আকাক্সক্ষা থেকে সরে গেছে। নাটোরের কর্মসূচিতে ন্যক্কারজনকভাবে বাধা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। মাত্র এক বছর আগে ব্যানার ছিঁড়ে কর্মসূচিতে যারা বাধা দিয়েছিল বাংলার জমিতে তাদের ঠাঁই হয় নাই।

এখনো শিক্ষা না নিলে বাধা প্রদানকারীদের পরিণতিও তাদের মতোই হবে। তিনি বলেন, গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার আমরা বিচার দেখতে চাই। সংস্কার দেখতে চাই এবং নতুন সংবিধান দেখতে চাই। এই প্রজন্ম বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, দেশের মানুষকে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেবে।

যে সংবিধান দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে। ইনসাফ নিশ্চিত করবে। স্বৈরতন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে এই বাংলাদেশ থেকে। মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা নতুন বন্দোবস্ত গড়ে তুলব।

রাজশাহী ঐতিহ্যের নগরী উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, রাজশাহী ঐতিহ্যের নগরী। রাজশাহী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির নগরী। এই পদ্মার পারে রাজশাহী যুগ যুগ ধরে টিকে ছিল। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী এই রাজশাহী থেকে ফারাক্কা লংমার্চ শুরু করেছিলেন। আমরা ঘোষণা করছি, যদি নদীর হিস্যা, পানির হিস্যা বুঝে নিতে হয়। আমাদের সীমান্তকে রক্ষা করতে হয়। তাহলে আমরা লংমার্চ শুরু করব এই রাজশাহী থেকে।

সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, আপনারা প্রস্তুত হোন। ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে দেখা হবে। আমরা জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়ব। যারা বলে, জুলাই কেবল আবেগের বিষয়। যারা বলে, জুলাইকে কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়ার দরকার নেই, তাদেরকে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুজিববাদ ও মুজিববাদী সংবিধানের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে।

যারা জুলাইকে সংবিধানে জায়গা দিতে চায় না, কোনো আইনি কাঠামোতে জায়গা দিতে চায় না। তারা মুজিববাদের রাস্তা তৈরি করতে চায়। তারা মুজিববাদের নতুন পাহারাদার হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে কর্মসংস্থান থাকবে। শিক্ষা থাকবে।

রাজশাহীতে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। উন্নয়ন মানে কেবল ঢাকার উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এটার জন্যই সংস্কার, এটার জন্যই জুলাই পদযাত্রা। এই পদযাত্রা নতুন দেশ গঠনের যাত্রা। আমরা নতুন দেশ উপহার দিব বাংলাদেশের জনগণকে।

রাজশাহীর সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আখতার হোসেন বলেন, ঐকমত কমিশনে সংস্কারের আলোচনা চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন মৌলিক সংস্কারের পক্ষে সকলে এক হয়ে যায়, তখন একটি দলের কারণে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা ঐক্যমত্য কমিশনে আটকে যায়।

দলটিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ঐক্যমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারকে আটকে দিতে পারবেন। জুলাই সনদকে আটকে দিতে পারবেন। কিন্তু জনগণের কাছে সংস্কারের কথা আসলে জনগণ অবশ্যই সেই সংস্কার বাস্তবায়ন করে ছাড়বে, ইনশাল্লাহ। এ দেশের সংস্কার হবেই।

দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ২০২৪ এর জুলাইয়ের পর নতুন জুলাই এসেছে। কিন্তু আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। মনের ভেতরে এখনও আফসোস কাজ করে। ৫ আগস্টে এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, সেগুলো এখনও পূরণ হয়নি।

তাই যতদিন না আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলবে। এই উদ্দেশ্যে ৬৪টি জেলায় আমরা যাচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি। আপনি সবাইকে নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা বলা যাবে না। শেখ হাসিনা ফেরেস্তাদেরও ওপরে।

ঠিক এই কারণে ফেরেস্তা থেকে ফেরাউন, ফেরাউন থেকে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছে। আগামীর বাংলাদেশে যত বড়ই দল হোক, যত বড় নেতা কিংবা নেত্রী হোক, কাউকেই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখা হবে না।

দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ডিসি-এসপিদের বলছি- আপনারা যে ভালো ব্যবহার করছেন, আমরা জানি, আপনারা চিপায় পড়ে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। যদি হাসিনার পতন না হতো, তখন এই ডিসি-এসপিরাই গণভবনেই প্রমোশনের জন্য লাইন ধরত।

সাংবাদিকদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে হাসনাত বলেন, আমরা সাংবাদিকদেরকে দেখছি। আমরা সাংবাদিকদের ওপরে নজর রাখছি। এই সাংবাদিকরাই জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদেরকে সন্ত্রাসী অ্যাখ্যা দেয়ার জন্য লেগেছিল। হাসনাত বলেন, এই তরুণ সমাজ আর দালালি করতে চায় না। কারও তাঁবেদার হতে চায় না।

তরুণ সমাজ আর স্বৈরাচার হতে চায় না। সুতরাং, যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা জেনে রাখুন, আপনারা এই তরুণ সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মুরুব্বিরা ফেইল করেছেন। বাবারা ফেইল করেছেন। তখন সন্তানেরা রাস্তায় নেমে এসেছে।

দুই সমাবেশেই এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের শান্তির মোড় থেকে বেলা দুইটায় শুরু হয়ে বাতেন খাঁর মোড়, নিমতলা মোড়, বড়ইন্দারা মোড়, গাবতলা মোড় হয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে পথসভা হয়।