মেয়ের সাথেই মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াতে চান আব্দুল হানান

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষার জন্য কোন বয়সের সীমা রেখা নেই, বিষয়টি প্রমাণ করেছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে আব্দুল হান্নান (৪২)।
চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় তার মেয়ে হালিমা খাতুনের সাথে পৃথক দুটি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। শুধু এইচএসসি পরীক্ষা নয়, মেয়ের সাথে তিনি মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করতে চান।
জানা যায়, আব্দুল হান্নান ২০২৩ সালে তার মেয়ে হালিমা খাতুনের সাথে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হন। এরপর মেয়েকে গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে ও নিজে বাঘা উপজেলার কাকড়ামাড়ি কলেজে ২০২৩-২০২৪ সেশেনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। আব্দুল হান্নানের পরিবারে স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফালতু বিনোদন নামক একটি পেজে সমাজের নানা অসংগতি ও শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করেন আব্দুল হান্নান। তিনি এলাকার শিশু কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলার ব্যাপারে কাজ করেন।
আব্দুল হানান জানান, ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেন নাই তিনি। তার পরে সাংসার জীবনে চলে আসায় পড়াশুনা হয় নাই। কিন্তু মনের ভিতরে পড়ালেখা করার সুপ্ত বাসনা থেকে যায় তার।
সেই সুপ্ত বাসনা থেকেই দীর্ঘ ২৫ বছর পরে ২০২১-২০২২ সেশনে উপজেলার রুইগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখায় ভর্তি হয়ে চায়ের দোকানে বসে পড়াশুনা করে মেয়ের সাথে এসএসসি পাস করেন। এরপর মেয়েকে গোপালপুর কলেজে ও নিজে বাঘা উপজেলার কাকড়ামাড়ি কলেজে ভর্তি হন।
প্রবল ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবছর আবার মেয়ের সাথেই এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তিনি আরও জানান, গোপালপুর রেলগেট এলাকায় একটি চায়ের দোকানে চা বিক্রয় করতেন। চায়ের দোকান চালিয়ে লেখাপড়া করা কঠিন হওয়ায় তিনি দোকান ভাড়া দিয়ে এখন নিজের জায়গা জমিতে কৃষি চাষাবাদের পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়ের সাথে তিনি মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করতে চান।
মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন, বাবার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা থাকায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমার সাথেই পাশ করেন। এ বছর আবার বাবার সাথে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। হালিমা আরো জানান, আমি বাবার সাথে প্রতিযোগিতা করে পড়াশুনা করি। আপনারা দোয়া করবেন, আমরা যাতে এবারো পাশ করি।
আব্দুল হান্নানের প্রতিবেশি ও বাঘা শাহদোলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মঞ্জুরুল হক জানান, ৪২ বছর বয়সে আব্দুল হানান তার মেয়ে হালিমা খাতুনের সাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বিষয়টি জেনে আমরা গর্ববোধ করি। শিক্ষার কোন বয়স নেই বিষয়টি তিনি প্রমাণ করেছেন। আমি তাদের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।