ঢাকা | জুলাই ১৪, ২০২৫ - ১:৩৭ পূর্বাহ্ন

নওহাটা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাণ্ড

  • আপডেট: Tuesday, July 8, 2025 - 12:44 am

স্টাফ রিপোর্টার: নওহাটা সালেহিয়া দারুস সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের শুরুতেই উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দেলোয়ার হোসেন নামের এক চাকরিপ্রার্থী জেলা প্রশাসক বরাবর এমন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন এবং পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরি দেবার নামে টাকা নিয়েছেন। তাঁর আশঙ্কা, নিয়োগের আয়োজন লোক দেখানো। ইতোমধ্যে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়ে গেছে টাকার বিনিময়ে। অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘গত ২৩ জুন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা গোপন রাখা হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ল্যাব সহকারী পদ একটি রাখার নিয়ম থাকলেও নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে আরো একটি পদ বাড়ানো হয়েছে, যা প্রমাণ করছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি অনুসরণ করেনি।’

অভিযোগকারী বলেছেন, ‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থীর কাছ থেকে ইতিমধ্যে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন এবং পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য মিলে এই অনিয়মের পরিকল্পনা করেছেন। মাদ্রাসার বিগত পাঁচ বছরের কোন হিসাব-নিকাশও প্রকাশ করেননি অধ্যক্ষ, যা প্রমাণ করে যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতা নেই এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’

ইতিপূর্বে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছিল। এসব অভিযোগের কপিও সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন নূর ইসলাম খান নামের এক চাকরিপ্রার্থী।

তিনি অভিযোগ করেন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির জন্য ২০২১ সালে অধ্যক্ষ তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলে ওই পদে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নূর ইসলামকে অধ্যক্ষ টাকা ফেরত দেননি।

এছাড়া ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ সিদ্দিকুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তিনি অভিযোগে বলেন, সিদ্দিকুরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেবেন বলে ২০২০ সালে বাড়িতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা নেন অধ্যক্ষ।

তিনি বলেছিলেন, এই টাকা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও স্থানীয় এমপিকে দিতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নিয়োগ না দেওয়ায় সিদ্দিকুর রহমান স্থানীয় এমপির সঙ্গে দেখা করতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি নিয়োগ দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।

এসব অভিযোগের কারণে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলাম অধ্যক্ষ আলতাফ উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। ওই নোটিশে চাকরি দেয়ার নামে টাকা নেওয়া ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা তছরুপ নিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উঠে আসা ১১টি আপত্তি ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়।

তবে নানা কায়দায় পার পেয়ে যান অধ্যক্ষ আলতাফ উদ্দিন। এবার তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠল। অভিযোগকারী চাকরিপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সকল প্রার্থীকে আবেদন করার সুযোগ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আলতাফ উদ্দিন বলেন, ‘কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। নিয়োগ কাউকে দেয়া হয়নি এখনও।

এরমধ্যে লিখিত অভিযোগ করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’ তিনি দাবি করেন, নূর ইসলাম খান ও সিদ্দিকুর রহমান চাকরির জন্য টাকা দেওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটিও মিথ্যা। অর্থ তছরুপের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সভাপতি আমাকে শোকজ করেছিলেন। আমি জবাব দিয়েছি। যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তিনি আবার তদন্ত করে দেখবেন।’