সরকারের জাতীয় ঐকমত্যের উদ্যোগে বাধা একটি দল —-জামায়াত সেক্রেটারি

সোনালী ডেস্ক: জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পেছনে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য এবং জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেই উদ্যোগে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সমর্থন জানালেও একটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।
ফলে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি নিজের ও দলীয় স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের কাউন্সিল হলে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের সাংগঠনিক থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় জামায়াত।
পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে না উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার ফলে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষ তার অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কারণ একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী করে তোলে।
কিন্তু এই ব্যবস্থায় ভোট ডাকাতির কোনো সুযোগ নেই এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। এজন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সর্বোত্তম পদ্ধতি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছে।
তবে কোনো কোনো দলের কর্মকাণ্ডে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে একদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার প্রমাণ হবে, অপরদিকে জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্ভোগ লাঘব হবে।
সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি না থাকায় স্থানীয় সরকারের সকল ক্ষমতা ডিসি-ইউএনওদের হাতে। ফলে জনগণকে আমলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে চলছে দুর্নীতি মহোৎসব।
তাই জামায়াতে ইসলামী; রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি জামায়াতে ইসলামীর একার নয়। এই দাবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ও সর্বস্তরের জনগণের, বলেন পরওয়ার।
তিনি বলেন, চব্বিশের ছাত্র-জনতা একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে লড়েছে। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি দিতে দুই সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে, ৫০ হাজারের বেশি আহত ও পঙ্গু হয়েছে। তাদের লড়াইয়ের মূল ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই বৈষম্য পুনরায় সৃষ্টি হলে রাষ্ট্র কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। বৈষম্যের জন্ম একক কর্তৃত্ব থেকেই।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র উপহার দেবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, এতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা প্রমাণ হবে এবং জনপ্রতিনিধিত্বহীন অবস্থায় চলা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্ভোগও লাঘব হবে। বর্তমানে ডিসি-ইউএনওদের হাতে সব ক্ষমতা চলে যাওয়ায় জনগণকে আমলাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই সুযোগে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। এজন্য জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়।
এই দাবি জামায়াতে ইসলামীর একার নয়, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। জাতীয় ঐকমত্যের পেছনে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে বেশিরভাগ দল সমর্থন জানালেও একটি দল বিরোধিতা করছে। এতে ঐক্য গঠনের পথে বাধা তৈরি হচ্ছে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থে একমত হওয়ার আহ্বান জানান। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে সম্মানী ও আহতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সফল হয়েছে। অথচ যারা সে সময় নীরব ছিল, আজ তারাই বড় বড় কথা বলছে।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের প্রেরণা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে। শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে সবাইকে স্বার্থপরতা ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।
আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও মোবারক হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেজাউল করিম প্রমুখ।