ঢাকা | জুলাই ৪, ২০২৫ - ২:২৪ অপরাহ্ন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় দক্ষ শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা

  • আপডেট: Friday, July 4, 2025 - 12:22 am

সোনালী ডেস্ক: দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় দক্ষ শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ কমানোতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৬ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬২৮ কোটি ৬০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আর আগামী অর্থবছরে এ খাতে ৯১ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

যা বিগত বছরের তুলনায় ৫৩৭ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বা ৮৫ দশমিক ৫১ শতাংশ কম। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৪১৫ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার টাকা করা হয়। ওই হিসেবে সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ বরাদ্দ কমছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দক্ষ শিক্ষকের সঙ্কট দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তীব্র।

এর মধ্যে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ কমানোতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে দক্ষ শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যদিও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের মতে, পিইডিপি-৪ প্রকল্প শেষ পর্যায়ে থাকায় ও অতিরিক্ত ব্যয় বাদ দেয়ায় বরাদ্দ কমেছে। আর বরাদ্দ কমানো নেতিবাচক প্রভাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ব্যাপকভাবে পড়বে।

কারণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষাই শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। অথচ ওই স্তরেই দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষ শিক্ষকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। ওই ঘাটতি দূর করতে শিক্ষকদের মানসম্মত, উন্নত প্রশিক্ষণ জরুরি। অথচ এ খাতে বরাদ্দ আরো কমানো শিক্ষায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

সূত্র জানায়, বিগত সময়ে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে শিক্ষা বরাদ্দে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়সহ নানা অভিযোগ ছিল। যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মানসম্মত প্রশিক্ষণে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ নেই।

অথচ জাতির স্বাথে সরকারের এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।

শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে সরকারি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক আছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার ২৯৩ জন। তাদের মধ্যে পেশাগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোট ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭ জন। অর্থাৎ এখনো পেশাগত প্রশিক্ষণের বাইরে মোট শিক্ষকদের অর্ধেকের বেশি। এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৯৬৫ জন। শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৮২৬ জন।

সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) অধীনে ৬৭টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।

তবে এ পিটিআইগুলোয়ও দীর্ঘদিন ধরে ইনস্ট্রাক্টর সঙ্কট, কারিকুলামসহ বিভিন্ন সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তাছাড়া বিগত সরকারের সময়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, চাহিদাভিত্তিক সাব-ক্লাস্টারসহ বেশকিছু প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ওসব প্রশিক্ষণের বেশির ভাগেই অর্থ লুটপাট হয়েছে। ফলে মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত হয়নি, বরং শিক্ষকদের ঘাটতি থেকে গেছে। আগে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (পিইডিপি) এ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ ছিল। এখন এ প্রকল্প প্রায় শেষের দিকে। পিইডিপি-৫ এখনো শুরু হয়নি।

তাছাড়া এবারো অপ্রতুল শিক্ষায় বরাদ্দ। আর বরাদ্দের বড় অংশই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বেতনভাতা দিতে ব্যয় হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উন্নত প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলোয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও বরাদ্দ নেই। শিক্ষার উন্নয়ন করতে চাইলে অবশ্যই ওসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে ও বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।

এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন জানান, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ জরুরি। এ বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা দাবি জানানো হচ্ছে। এখন প্রতি দুই-তিন বছর পর পর হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ।

কিন্তু এ প্রশিক্ষণ প্রতি বছর অন্তত একবার হওয়া উচিত। এছাড়া শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে সব শিক্ষকের আইসিটি প্রশিক্ষণও জরুরি। কিন্তু প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়, তবে প্রাথমিক শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS