নওহাটা স্কুলে স্থাপন করা হলো আধুনিক প্রযুক্তির কারিগরি ল্যাব

স্টাফ রিপোর্টার: বইয়ের পাতায় দেখা জটিল সব যন্ত্রের ছবি এখন জীবন্ত। মেশিনের শব্দ আর যন্ত্রাংশের স্পর্শেই এখন কাটবে ক্লাসের বড় একটি অংশ। পবা উপজেলার নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বৃহস্পতিবার এমনই এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় এই বিদ্যালয়টিতে স্থাপন করা হয়েছে একটি কারিগরি ল্যাব, যা হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।
এই যুগান্তকারী ল্যাবটির উদ্বোধন করেন পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় এখনকার বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের প্রয়োজন কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ একটি প্রজন্ম। নওহাটার এই ল্যাবটি সেই লক্ষ্য পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, টিআর প্রকল্পের আওতায় সারা বাংলাদেশে এটিই প্রথম কারিগরি ল্যাব, যা পবা থেকে শুরু হলো। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরাই একদিন দেশের সমৃদ্ধি আনবে এবং দেশ গঠনে নেতৃত্ব দেবে।” তিনি সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনের প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য তুলে ধরে বিস্তারিত বক্তব্য দেন এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু বাশির। তিনি বলেন, “সাধারণত টিআর কর্মসূচি দিয়ে আমরা রাস্তাঘাট, সেতু বা কালভার্টের মতো গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকি।
কিন্তু সরকার এখন মানবসম্পদ উন্নয়নকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ একটি দেশের সেরা অবকাঠামো হলো তার দক্ষ ও শিক্ষিত নাগরিক। এই ভাবনা থেকেই আমরা শিক্ষা খাতে এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি এবং সরকারি অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশ্বমানের সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছি।”
এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী বলেন, “ভোকেশনাল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো কর্মমুখী জ্ঞান প্রদান। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারিক জ্ঞান দিতে পারছিলাম না। এই ল্যাব আমাদের সেই সীমাবদ্ধতা দূর করল। এটি শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, পুরো অঞ্চলের কারিগরি শিক্ষার প্রসারে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।”
এলাকার শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবকেরা আশা করছেন, এই ল্যাব চালুর ফলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।