ঢাকা | জুলাই ৫, ২০২৫ - ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কে শিক্ষার্থী-জনগণের দুর্ভোগ চরমে

  • আপডেট: Friday, July 4, 2025 - 11:56 pm

রেজাউল ইসলাম সেলিম, নিয়ামতপুর থেকে: মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের (টিটিহার-ঠংকাপুর মোড়) কারণে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের টিটিহার এলাকার শিক্ষার্থী ও এ এলাকার জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপজেলার সাথে।

এসময় জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হয় এলাকাবাসী। শিক্ষার্থীদের কাঁচা সড়কের কাঁদা মাড়িয়ে কষ্ট করে স্কুল বা কলেজে যেতে হয়। শুধু তাই নয় কাঁচা সড়কের কারণে এ এলাকার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যও পাননা কৃষকরা। অথচ সংশ্লিষ্টদের নিকট দীর্ঘদিন থেকে এ সংযোগ সড়কটি পাকা করণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে একটি পাকা রাস্তা টিকরামপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ঠংকাপুর মোড় হয়ে মিলিত হয়েছে আড্ডা বাজারে। ঠংকাপুর মোড় থেকে টিকরামপুর গ্রামের দূরত্ব ২ কিলোমিটার।

এ এলাকার সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাবেচা করে থাকেন আড্ডা বাজারে। কিন্তু বর্তমান বর্ষা মওসুমে টিকরামপুর গ্রাম থেকে ঠংকাপুর মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কে যাতায়াত করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে চরমে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার মানুষের গ্রামটি উপজেলা সদর নিয়ামতপুর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিম ও আড্ডা বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

শীতকালে গ্রামের রাস্তাটি দিয়ে কোনোরকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় পায়ে হাঁটা ছাড়া গতান্তর থাকে না। গ্রামবাসীর উৎপাদিত জমির ফসল আনা-নেয়া, বাগানের শত শত মণ আম-পেয়ারা ও পুকুরের মাছ পরিবহনে চরম ভোগান্তি  পোহাতে হয় রাস্তাটিতে। বর্ষায় ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে-পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেয়া করতে হয়।

এছাড়াও গ্রামটিতে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাদা মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে থাকে। অনেকেই মনে করছেন, শুধু যোগাযোগ ব্যস্থার করণেই শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে এ এলাকার মানুষ।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা সদর থেকে প্রায় প্রায় ১৬ কিলোমিটর দূরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী কাঁচা সড়কের কাদার মধ্য দিয়ে বই বুকে জড়িয়ে পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী বাইসাইকেল ঠেলে কন রকমে পার হচ্ছে রাস্তা।

জানতে চাইলে সে জানায়, টিটিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। বাড়ি থেকে বিদ্যালয় দুরে হওয়ায় সাইকেলে কওে যাওয়া আসা করে। কিন্তু বৃষ্টি একটু  বেশি হলেই কাঁচা রাস্তায় পানি জমে যায়। তখন সাইকেল টেনে নেয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে।

এ এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউসুফ আলী কলেজ ও মহিলা কলেজে লেখাপড়া করেন।

তারা প্রতিদিন বাড়ী যাওয়া-আসার পথে এ সড়কে নানান বিড়ম্বনার শিকার হন। টিকরামপুর গ্রমের কৃষক জামাল, ধান ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম, আম ব্যবসায়ী কারিম  জানান, তাদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব অনেক।

তাই পার্শ্ববর্তী গোমস্তাপুর ও পোরশা উপজেলা তাদের কাছাকাছি হওয়ায় তাদের উৎপাাদিত ফসল ধান, গম,আম ও পুকুরের মাছ তারা মুর্শিদপুর, সোনাইচন্ডী ও রহনপুরের হাটে তুলে থাকেন। কিন্তু ওইটুকু কাঁচা সড়কে বর্ষাকালে কাদার মধ্য দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে সীমাহীন কষ্ট হয় তাদের। মাঝে মধ্যে কষ্টের কথা ভেবে গ্রামেই ফড়িয়াদের নিকট কম দরে বিক্রি করে দেন তাদের কষ্টার্জিত ফসল।

ওই গ্রামে অবস্থিত টিকরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ইব্রাহিম খলিল জানান, তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। সড়কটি পাকা হওয়া এখন সময়ের দাবি। পল্লী চিকিৎসক শফিউল আযম এ প্রতিবেদককে বলেন, শুধু কাঁচা সড়কের কারনে এ এলাকার মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিতে পারেন না তারা।

ফলে সুচিকিৎসার অভাবে অনেক সময় অকালে ঝরে পড়ে প্রাণ। সংশ্লিষ্ট রসুলপুর ইউপির প্যানেল  চেয়ারম্যান আবু তাহের হিরা বলেন, গ্রামের রাস্তাটি পাকা করার জন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার তদবির করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও এ বিষয়ে কথা বলেছি।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি সম্পর্কে খোঁজ না নিয়ে এ মূহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। উন্নয়নের জন্য রাস্তাগুলো তালিকাভুক্ত আছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে বলা যাবে। তবে সুযোগ থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS