ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর তীব্র সঙ্কটে রাজশাহীর গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা

অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির শঙ্কা:
মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: রাজশাহীর চারঘাটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। সেবাদান কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলেও ওষুধ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
এতে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে রাজশাহীর চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। ফলে, বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির শঙ্কা।
জানা যায়, উপজেলার সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা নেন উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার ৩০৫ জন দম্পতি।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ ও পরিবার পরিকল্পনার জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহে চরম ঘাটতি রয়েছে। নেই ডিডিএস কিট, ইমপ্ল্যান্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট।
এতে গর্ভবতী মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বুধবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, জনবল ও চিকিৎসা সামগ্রী সঙ্কটে রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে। যে কয়েকজন রোগী আসছেন তারাও ওষুধ কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন।
উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এসেছিলেন ভ্যান চালক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অনেক দাম। এজন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তিনি প্রতি মাসে কনডম সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে চাহিদার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছেন আবার কখনও পাচ্ছেন না।
এ অবস্থায় অধিক টাকা দিয়ে দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতে গিয়ে তিনিসহ তার পরিচিত অনেকের বাড়তি খরচের বোঝা চেপেছে। ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মেহেরুন নেসা বলেন, জনবল সঙ্কটে ঠিকমত খোলা থাকেনা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে সময়টুকু খোলা থাকে, জ্বর-সর্দির ওষুধও থাকে না।
কয়েক মাস ধরে একটা ওষুধও দেয়নি। শুধু প্রেসার মেপে বাড়ি পাঠাচ্ছে। আগে কিছু ওষুধ পেলে সংসারের খরচের ওপরে চাপ কমতো।
দিনমজুর পরিবারে কয় টাকা আয় হয় আপনারাই বলেন! শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসার নাসিম আহমেদ বলেন, আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি।
রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী আসতেন। কিন্তু এখন আসছেন ১০-১২ জন। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ২৩ রকমের ওষুধ পেয়েছি, এরপর থেকে সরবরাহ বন্ধ। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও ঠিকমত দিতে পারছি না।
নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ থাকায় রোগীরা তেমন আসছেন না। কনডম, খাবার বড়িসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় দম্পতিদের চাহিদার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫০ হাজার ৩০৫ জন দম্পতির জন্য প্রতিমাসে ১৫ হাজার সেট সুখী তৃতীয় প্রজন্মের খাওয়ার বড়ির চাহিদা থাকলেও এ মাসে সরবরাহ রয়েছে মাত্র ১৫৪ সেট। ২৫ হাজার কনডমের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে ১৩ হাজার ৯০৫ পিস।
এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণের আইইউডি, ইমপ্লান্ট, ডিডিএস কিট এক পিসও সরবরাহ নেই। ২৩ রকমের ওষুধ ছয় মাস ধরে সরবরাহ নেই। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের চারঘাট উপজেলার সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, ২৩ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সাধারণ জনগণ স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলোতে গিয়ে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার মুখোমুখি হচ্ছেন।
এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে এ অঞ্চলে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেয়ে রোগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ কমেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি অবগত আছেন।