মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি। জনজীবনে নেমে আসা তীব্র সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে “ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও” স্লোগানে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে এ আয়োজন করে পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের ২০২৫ সালের জুন মাসের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও বাজারে প্রত্যাশিত স্বস্তি আসেনি। বিশ্লেষকদের মতে, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, অবৈধ মজুতদারি এবং বাজারে নজরদারির ঘাটতির কারণেই চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, অথচ ভোক্তাকে চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল ও সবজি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, জেলা কৃষক দলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত, সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান, রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা আফজাল হোসেন ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট দিলসে তারা চুনি।
বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না।
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্যমতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি মাসে ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসম্পন্ন খাবার গ্রহণে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্র্যসীমার তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি।
চালের দামসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির এই সংকট নিরসনে খানি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো-কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বাড়াতে হবে। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বাজার, উৎপাদন, মূল্যনির্ধারণ ও ভোগ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধে যথাযথ নজরদারির মাধ্যমে চালের বাজার স্থিতিশীল করে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে এই দাবিগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে, যেন দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কর্মসূচিতে স্থানীয় জনসাধারণ, যুব প্রতিনিধি, পরিবেশ সচেতন মানুষ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও পরিবেশকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।