ঢাকা | জুন ৩০, ২০২৫ - ৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

অচলাবস্থা সমাধানে উপদেষ্টা কমিটি শাটডাউন বনাম সরকারের কঠোরতা এনবিআর সঙ্কট ঘিরে অচলাবস্থা তীব্র

  • আপডেট: Monday, June 30, 2025 - 12:30 am

সোনালী ডেস্ক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত ঘিরে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থা এখন আরও জটিল আকার নিচ্ছে। আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের অনমনীয়তা, সরকারের কঠোর অবস্থান এবং অর্থ উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিলের প্রেক্ষাপটে রাজস্ব খাত, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং সামগ্রিক অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সরকার উপদেষ্টা কমিটি গঠনের পাশাপাশি এনবিআরের আওতাধীন সব সেবা অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে ঘোষণা করেছে, অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ কমিটিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত, শ্রম ও কর্মসংস্থান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তাদের দায়িত্বের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।

একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, জনস্বার্থে এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে রোববার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “কর্মকর্তারা শাটডাউন করতে চাইলে করুক। তবে শাটডাউন চলতে থাকলে তাঁদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হবে না।” তাঁর বক্তব্যের পরপরই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শফিউল বাসার বাদল বলেন, “আমরা শাটডাউন স্থগিত করে আলোচনায় বসতে চাই না। কারণ, আমরা আবার ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে চাই না।”

রোববার বিকেল চারটায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এমনকি ১ জুলাই নির্ধারিত আরেকটি বৈঠকও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তুত রেখেছিলেন, যেখানে আয়কর, কাস্টমস এবং ভ্যাট ক্যাডারের কর্মকর্তারা সমান সংখ্যায় ছিলেন।

এই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারের। চলমান অচলাবস্থার কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ভয়াবহ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারি, শুল্ক মূল্যায়ন এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স কার্যত বন্ধ রয়েছে। ফলে রাজস্ব আহরণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, প্রতিদিন শুধু তৈরি পোশাক খাতেই প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

অচলাবস্থার মূল সূত্রপাত ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করা এক অধ্যাদেশ থেকে। ওই দিন এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল নীতি প্রণয়ন এবং কর আদায়ের কাজ আলাদা করা। যদিও এনবিআরের কর্মকর্তারা তাতে মৌলিকভাবে আপত্তি করেননি, তবে পদায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রাধিকার দাবি করছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয় আন্দোলন, যা ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে সাময়িক স্থগিত হয়। কিন্তু ২২ জুন থেকে চেয়ারম্যানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু হয়। শনিবার আন্দোলনকারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করেন।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরকার এক বিবৃতিতে এনবিআরের আওতাধীন সব চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে কাজে ফেরার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, রাজস্ব আহরণ দুর্বল হওয়ায় দেশের বাজেট বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

তাছাড়া, আন্দোলনকারীরা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়। অন্যদিকে গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সঙ্গে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।

বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, চলমান অচলাবস্থা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি-রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য রাজস্ব খাতের এই অচলাবস্থা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সরকার কঠোর অবস্থান নিলেও আন্দোলনকারীদের অনড় মনোভাব পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। ফলে রাজস্ব, বাণিজ্য এবং অর্থনীতি-সবক্ষেত্রেই উৎকণ্ঠা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS