পদ্মার পানি বাড়ায় ভাঙনের আতঙ্ক নির্ঘুম রাত কাটছে তীরবর্তী মানুষের

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: বর্ষার মৌসুমে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। সেই সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙনও। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলায় পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরেই নদী ভাঙনের শিকার এসব মানুষগুলো। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এরই মধ্যে কয়েক হাজার পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
কেউ আবার জায়গা-জমি সব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙনের কবলে পড়ে হয়েছেন ভূমিহীন। এবারও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই চারঘাটের ইউসুফপুর ইউনিয়নের সাহাপুর এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে এসব এলাকায় কার্যক্রম নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে পদ্মাপাড়ের ইউসুফপুর ইউনিয়নের সাহাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। তারা এখন ঘরবাড়ি নিয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পদ্মা পাড়ের সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা হিয়াদ আলী’র (৪৫) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতি বছরই নদীতে বিলীন হচ্ছে তাঁদের বসতভিটা ও কৃষিজমি।
ভাঙন রোধে নেই কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা। যখন ভাঙন শুরু হয় তখনই কেবল নামমাত্র কাজ করা হয়। যে কাজে কোনো সফলতা আসে না। শুধু সরকারের টাকা নষ্ট। এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। পদ্মার তীরবর্তী গোপাল মন্ডলের স্ত্রী শীলা মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন স্থায়ীভাবে পদক্ষেপ নেইনি।
পদ্মা নদীপাড়ের শেফালী বেগম বলেন, গতবছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়, তখন আমার একটি বসত ঘর নদী ভাঙনে পদ্মার মধ্যে চলে যায়।
এবারও আমার আরেকটি ঘর যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। পদ্মা পাড়ের স্থানীয় দোকানদার নূর ইসলাম বলেন, জিও ব্যাগ ফেলেও কোন ভাঙন রোধ করা যাবে না।
জিও ব্যাগ না ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ করলে এই ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে বলে তিনি জানান। পদ্মা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা কোন সাহায্য চাই নাই। আমাদের নিরাপদের বসবাসের জন্য জিও ব্যাগ না ফেলে বাঁধ নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি।
ইউসুফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মাখন-এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি সেখানে পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ বলেন, নদী ভাঙন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চলমান রয়েছে। তবে পানি বাড়ায় যেসব এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হচ্ছে, সেখানে জিও ব্যাগ ফেলাসহ যাবতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নদী ভাঙনের সংবাদ পেয়ে সাথে-সাথে আমি সেখানে গিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকাবাসীর সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।