মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করতে হবে

সম্পাদকীয়
পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বয়ে আনছে। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার জীবের একত্রে সমাবেশই হলো জীববৈচিত্র্য। পৃথিবীতে জীবনের বিভিন্নতা ও পরিবর্তনশীলতাই জীববৈচিত্র্যের মূল বিষয়।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী নামক গ্রহ সৃষ্টির পর থেকেই শুরু হয়েছে প্রাণী ও উদ্ভিদের সম্পর্ক। পৃথিবীতে সৃষ্টির সবকিছুই পরস্পর নির্ভরশীল ও বাস্তুসংস্থানের অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু পৃথিবীব্যাপী দূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দুর্যোগ, প্রকৃতি-পরিবেশ বিনাশী কার্যকলাপ, যুদ্ধ, মানুষের অসচেতনতাসহ নানা কারণে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ। আর জলাভূমি হলো জীববৈচিত্র্যের সুপার মার্কেট। আমাদের দেশ জৈব-ভূতাত্ত্ব্বিক পরিমণ্ডলে হওয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের অবস্থান অনেকটা ইন্দো-মালয়ান এবং ইন্দোচীনের সঙ্গে মিল রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হওয়ার রয়েছে নানা কারণ।
যেমন- ক. জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান হ্রাস ও বিভাজন, খ. বিদেশি প্রজাতির অনুপ্রবেশ, গ. বিরোধী প্রজাতির অনুপ্রবেশ, ঘ. সমুদ্রের অতিরিক্ত ব্যবহার, ঙ. বায়ু, পানি, মাটি-দূষণ, চ. নিবিড় কৃষিকাজ, ছ. এক ফসলি চাষ। বহু প্রজাতির প্রাণী মানুষের অবিবেচক কাজের ফলে এরই মধ্যে চিরতরে বিলুপ্ত।
এ ছাড়াও অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। প্রকৃতি ধ্বংসের বর্তমান এই ধারা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে হচ্ছে, তা যদি চলতে থাকে, তাহলে ২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি তিনটির মধ্যে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে।
দেখা গেছে, গত ৫০ বছরে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি বন্যপ্রাণী হ্রাস পেয়েছে। আর সে হিসাবে গত ১০ মিলিয়ন বছরের তুলনায় বর্তমানে প্রজাতি বিলুপ্তির গড় হার ১০-১০০ গুণ বেশি। আমাদের দেশে একসময় যে-সব এলাকায় শেয়াল, বনরুই, কাস্তেচড়া, ঘড়িয়াল চোখে পড়ত, এখন সেসব নাম কেবল গল্পে শোনা যায়।
বাংলাদেশের ৩৮টি স্তন্যপায়ী ও ৫০টিরও বেশি পাখির প্রজাতি ইতিমধ্যে বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত। মধুপুর বন, সুন্দরবন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন এলাকার জীববৈচিত্র্য তীব্র হুমকিতে। অথচ আমাদের দেশের সংবিধানে (অনুচ্ছেদ ১৮-ক) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা হলেও কার্যকর প্রয়োগের ঘাটতি চোখে পড়ে প্রতিনিয়ত।
মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ উন্নয়নসংক্রান্ত নীতিমালা করতে হবে। বিশেষ করে দেশের কৃষি অগ্রযাত্রাকে সুষ্ঠুভাবে ত্বরান্বিত করতে জীববৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও মানুষকে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।