ঢাকা | জুন ২৯, ২০২৫ - ৩:৪১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

দেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ার শঙ্কা

  • আপডেট: Sunday, June 29, 2025 - 12:05 am

সোনালী ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরেই স্বাভাবিক প্রসবের সময় ব্যবহার হওয়া বিনামূল্যের ওষুধ ও সরঞ্জামের প্যাকেট ‘নরমাল ডেলিভারি কিট’ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আর মা ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বিনা মূল্যের প্রয়োজনীয় ওষুধের প্যাকেট ‘ড্রাগ অ্যান্ড ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট (ডিডিএস) কিট’ সরবরাহও ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশে মা ও শিশু মৃত্যুর শঙ্কা বাড়ছে।

বর্তমানে সারা দেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পরিচালিত হাসপাতালেই প্রসব কিট ও ডিডিএস কিট সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পণ্যাগার ও ২২টি আঞ্চলিক পণ্যাগারে ওসব কিটের মজুত নেই।

উপজেলা পর্যায়েও ডেলিভারি কিটের মজুত নেই, আর ৯৬ শতাংশ উপজেলায় ডিডিএস কিটের মজুত নেই। যে কর্মসূচির আওতায় ওসব কিট কেনাকাটা করা হতো, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালের শুরু থেকে ওসব ওষুধ ও সরঞ্জামের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ওই কর্মসূচির অপারেশন প্ল্যান (ওপি) স্থগিত করে নতুন প্রকল্প নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ৯ মাস ধরে মজুত কমতে কমতে নেমে আসে শূন্যে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশজুড়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৩ হাজার ২৯১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ২৮২টি। তার মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে পুরোনো ২৪টি ও নতুন ১৫৯টি, উপজেলা পর্যায়ে ১২টি এবং জেলা পর্যায়ে ৬১টি। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে রাজধানীর আজিমপুরে ১৭৩ শয্যার ‘মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’ এবং মিরপুরের লালকুঠিতে ‘২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল’ পরিচালিত হচ্ছে। কম খরচে সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায় বলে দরিদ্র পরিবারের মা ও শিশুরাই এসব হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন বেশি।

সূত্র জানায়, বিনামূল্যের নরমাল ডেলিভারি কিটের একটি প্যাকেটে ১০টি স্বাভাবিক প্রসবের সরঞ্জাম ও ওষুধ থাকে। দেহে প্রবেশ করানোর স্যালাইন, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন, বাটারফ্লাই সুচ, একবার ব্যবহারযোগ্য সিরিঞ্জ, জীবাণুমুক্ত সার্জিক্যাল গ্লাভস, তুলা, জীবাণুমুক্ত গজ, সার্জিক্যাল টেপ, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ ১৭ ধরনের ওষুধ ও সামগ্রী একেকটি কিটে থাকে।

আর ডিডিএস কিটে থাকে ২৫ ধরনের ওষুধ। আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম উইথ ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট, সিপ্রোফ্লক্সাসিনসহ ১৭ ধরনের ট্যাবলেট, ২ ধরনের ক্যাপসুল, ২ ধরনের গুঁড়া ওষুধ, ২ ধরনের তরল ওষুধ, মুখে খাওয়ার স্যালাইন ও মলম।

হাসপাতালগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালে শুধু স্বাভাবিক প্রসব হয়। উপজেলা, জেলা ও ঢাকার হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রসবের পাশাপাশি সি সেকশনও হয়। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে চাহিদার তুলনায় ওসব সরঞ্জাম সরবরাহ কমই দেয়া হয়। বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ডিডিএস কিট এবং ২০ হাজারের মতো ডেলিভারি কিট সরবরাহ করা হয়।

সূত্র আরো জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) আওতায় অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচালিত হতো ডেলিভারি কিট ও ডিডিএস কিট সরবরাহ কার্যক্রম। ওই কার্যক্রম পরিচালনা হতো মাতৃ, শিশু, প্রজনন ও কৈশোর স্বাস্থ্য (এমসিআরএএইচ) শিরোনামের অপারেশন প্ল্যান বা ওপির মাধ্যমে।

চতুর্থ এইচপিএনএসপির মেয়াদ ছিল ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তারপর ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বরাদ্দ ছাড়া মেয়াদ বাড়িয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কর্মসূচির যে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল, তা দিয়ে কেনাকাটা করে ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হতো।

পরে প্রস্তাাবিত পঞ্চম এইচপিএনএসপির আওতায় ২০২৫ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই লক্ষ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাও হয়। তবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওপি স্থগিত করে দেয় এবং ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির নির্দেশনা দেয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ওই ডিপিপি তৈরি করে জমা দিয়েছে।

নতুন প্রকল্প তৈরির এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে ৯ মাস ধরে কেনাকাটা বন্ধ হয়ে মজুত সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও একই ওপির মাধ্যমে কার্যক্রম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও পরিচালনা হতো। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরুরি ওষুধ ও সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ঢাকার কেন্দ্রীয় পণ্যাগার এবং ভোলা, ফরিদপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, বরিশাল, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর, বান্দরবান, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, বগুড়া, চট্টগ্রাম ও খুলনা, মোট ২২টি আঞ্চলিক পণ্যাগারে স্বাভাবিক প্রসব কিট, ডিডিএস কিট, প্রসবের সরঞ্জামাদি সেট, বারবার ব্যবহারযোগ্য ক্লিনিক্যাল প্রসব সহায়ক সরঞ্জামাদি, ক্লিনিক্যাল প্রসব সহায়ক ওষুধ ও একবার ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জামাদির মজুত শূন্য।

একেকটি আঞ্চলিক পণ্যাগার থেকে কয়েকটি উপজেলায় পণ্য সরবরাহ করা হয়। ৪৯৪টি উপজেলায় নরমাল ডেলিভারি কিট বা স্বাভাবিক প্রসব কিটের মজুত শূন্য। আর ডিডিএস কিট নেই ৪৭৪টি উপজেলায়। সম্ভাব্য মজুতশূন্যতা ১৭টি উপজেলায়, ২টিতে মজুত কম এবং মাত্র একটি উপজেলায় মজুত সন্তোষজনক।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ বিভাগের পরিচালক মার্জিয়া হক জানান, চতুর্থ এইচপিএনএসপির মেয়াদ শেষে কিছু সিদ্ধান্তগত জটিলতার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেনাকাটা করা যায়নি। ফলে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পণ্যাগারে এখন ডিডিএস কিট, স্বাভাবিক প্রসব কিটসহ অন্যান্য জরুরি ওষুধ ও সরঞ্জামের মজুত নেই।

কোনো কোনো উপজেলায় অল্প পরিমাণে ডিডিএস কিট থাকলেও স্বাভাবিক প্রসব কিটের মজুত নেই। রাজস্ব খাত থেকে জরুরি ওষুধ ও সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জুন মাসের মধ্যে সরবরাহ শুরু করা যাবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে নতুন ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। ডিপিপি অনুমোদন হলে প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS