ঢাকা | জুন ২৯, ২০২৫ - ৩:৫২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

কমপ্লিট শাটডাউন: সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আটকে আছে ৫ শতাধিক ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক

  • আপডেট: Sunday, June 29, 2025 - 12:33 am

সারাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

চাঁপাই ব্যুরো শিবগঞ্জ প্রতিনিধি: এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে। কর্মসূচির কারণে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভারত থেকে কোন আমদানি পণ্য আসেনি।

এমনকি ভারতেও যায়নি কোন রপ্তানি পণ্য। ওপারের মহদিপুর স্থলবন্দরে আমদানির প্রায় ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে বলে জানা গেছে। এদিকে চলমান অচলাবস্থার কারণে দেশের ব্যবসায় দৈনিক প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। দ্রুত সঙ্কট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তারা।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। এ জন্য শুল্ক আদায়ের যাবতীয় কার‌্যক্রম বন্ধ আছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে। কাষ্টমস কর্মকর্তারা আরও জানান, কর্মসূচির কারণে বন্দরে অন্তত রপ্তানি পণ্যবাহী ১৬ টি ট্রাক আটকা পড়েছে। যেগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক ও আসবাব এবং খাবার জাতীয় সামগ্রী রয়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আরিফুল ইসলাম জানান, আজ রোববার সারাদিন শটডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে। সন্ধ্যা নাগাদ কেন্দ্র থেকে নতুন কর্মসূচি আসতে পারে। সে অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচিও পালন করা হবে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম জানান, কর্মসূচির কারণে আমদানি রপ্তানি একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ওপারে ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে আমদানি পণ্যবাহী পাচশ ট্রাক আটকা পড়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নুরুল হাসান জানান, দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ রোববারও এ কর্মসূচি চলবে বলে জানতে পেরেছি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আরিফ উদ্দিন ইতি জানান, ওপারে পাঁচশ’র ওপরে গো-খাদ্য, গুড়, কসমেটিকস ও পাথরসহ অন্যান্য কিছু পণ্য আটকে আছে। ভারতে পণ্যের জন্য আমাদের টাকা দেয়া আছে, এখন এলসির মাল না আসলে আমদানিকারকরা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। তাছাড়া, এমন অবস্থা চলমান থাকলে দেশিয় বাজারের গো-খাদ্য, গুড় ও পাথরসহ যেসকল পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়, সেসবের দাম বেড়ে যাবে।

এদিকে, শনিবার রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্পখাতের নেতারা জানান, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি কর্মসূচি গত ১৪ মে থেকে শুরু হলেও শনিবার থেকে তা পূর্ণাঙ্গ অচলাবস্থায় রূপ নিয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের বিরোধীতা করে নেতারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।

তবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কেউ শ্রমিক ইউনিয়নের মতো আন্দোলনে নামতে পারেন না। ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারা স্পষ্ট করেছেন, কোনো অবস্থাতেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। এনবিআরের কলম বিরতি কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সংকট নিরসনে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে।

নেতারা বলেন, বন্দরে পণ্য আটকে থাকায় ডিমারেজ বা জরিমানার পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে, যা ব্যবসায়িক খরচকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, আন্তর্জাতিক বাজার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। অর্ডার প্রতিবেশী দেশে চলে গেলে জাতীয় অর্থনীতির জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পণ্য ছাড় করতে বিলম্ব হওয়ায় বন্দরে ডেমারেজ বা অতিরিক্ত জরিমানার পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে। এতে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১. এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক করা।

২. বিতর্কিত অধ্যাদেশ আলোচনার মাধ্যমে পর্যালোচনা করা- যাতে আন্তর্জাতিক মান ও দেশের বাস্তবতা সমন্বয় হয়। ৩. ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তরের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো। ৪. এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সময়সীমাবদ্ধ সংস্কার কর্মসূচি চালু করা।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS