এডিপিভুক্ত ৪৫ প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে?

সোনালী ডেস্ক: কেউ বলতে পারছে না এডিপিভুক্ত ৪৫টি প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে। ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৩ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে এমন একটি প্রকল্প আছে। তাছাড়া দুটি ১১ বছরের, চারটি ১০ বছরের, সাত বছরের তিনটি এবং চার বছরের সাতটি প্রকল্প।
তাছাড়া ছয় বছরের তিনটি, তিন বছরের আটটি এবং বাকি প্রকল্পগুলো এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে রয়েছে। ওই প্রকল্পগুলোতে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। এমনকি আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ওসব প্রকল্পে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এডিপিভুক্ত দীর্ঘদিনের ৪৫টি প্রকল্পের ভবিষ্যতে কাজের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ ওসব প্রকল্পে জনগণের করের বিপুল টাকা খরচ হয়েছে। যা অপচয়ে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে বরাদ্দের সামান্য অর্থে আগামী এডিপি সংশোধনের আগ পর্যন্ত ওসব প্রকল্পের কোনো কাজই করা যাবে না। আর সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে কাক্সিক্ষত সুফল পেতেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র জানায়, চারবার সংশোধন করার পরও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।
আর আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে মাত্র এক লাখ টাকা। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ১০ বছরের পুরোনো। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ আছে। তাতেও বাস্তবায়ন সম্ভাবনা কম। এখন সামান্য বরাদ্দ দিয়ে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। এর ফলে পরে সংশোধন বা মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া যাবে।
একই অবস্থা রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পেও। তবে সেটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছিল। আর আগামী অর্থবছরে জুটেছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ। এ প্রকল্পটিও ১০ বছর ধরে চলছে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইআইবির ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন রেলপথ নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেয়া হয়েছে এক লাখ টাকা।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকল্পটি চলছে। টেলিটক নেটওয়ার্ক বিটিএস সাইটের ডিসি পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সেবার মান উন্নয়ন প্রকল্পও পেয়েছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ। তাছাড়া নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি প্রকল্প হলো বারহাট্টা উপজেলায় শিশুপার্ক নির্মাণ। এতে বরাদ্দ তিন লাখ টাকা।
কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিতে দেয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা। খুলনার ভৈরব নদীর তীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পাচ্ছে আট লাখ টাকা। জামালপুর নকশিপল্লী প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা।
শেখ হাসিনা স্পেশালাইহজড জুট টেক্সটাইল মিলস এক লাখ টাকা। বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লিমিটেড প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চলে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা এবং চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টে দেয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা।
সূত্র আরও জানায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই কম বরাদ্দ দিয়ে কোনো রকমে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে। যাতে আগামীতে সুযোগ এলেই ব্যয় বৃদ্ধি বা মেয়াদ বাড়িয়ে আবারো বরাদ্দ নেয়া যায়। এভাবে প্রকল্প চালু রাখলে সংশ্লিষ্টদের অনেক ধরনের লাভ হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজন না থাকলে প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতে এগুলোর পেছনে বাড়তি খরচের আশঙ্কা থাকে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন জানান, এটা একক কোনো কাজ নয়। যৌথভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এডিপি তৈরি হয়েছে। তবে কেন এতো কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানানো যাবে।