ঢাকা | জুন ২৮, ২০২৫ - ৪:০৬ পূর্বাহ্ন

বিল কুমারীতে আর ফোটে না জাতীয় ফুল শাপলা

  • আপডেট: Friday, June 27, 2025 - 11:12 pm

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে খাল, বিল, পুকুর নালা, ডুবা ও উন্মুক্ত জলাশয় এখন দেখা যাচ্ছে না গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও জাতীয় ফুল শাপলা ও ঢ্যাপ। এক সময় গ্রাম-গঞ্জে ডোবা-নালায় এবং খালেবিলে, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সমারহ ছিল দেখার মতো।

বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর পরিমাণে শাপলা, শালুক ও ঢ্যাপ নামের ফুল। লাল কিংবা সাদা শাপলা দেখে মুগ্ধ হন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সঙ্গে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল ঢ্যাপ।

এলাকাবাসী বলছেন, বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় বিভিন্ন খালেবিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে ও রাস্তার ধারের নয়নজুলিত ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ, অতি মাত্রায় নিচু জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ। শাপলার ফলকেই ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়।

কিছু আঞ্চলিক নামে ‘ভেট’ বলা হয়। এক সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে খেতেন। শুধু তাই নয়, এই ঢ্যাপ আমাশয়, বদ হজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকরী বলেও প্রচলিত রয়েছে গ্রামে। কিন্তু শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময় তানোর উপজেলা বিল কুমারী বিল ও  অসংখ্য খাল ও জলাশয়ে শাপলা ফুল ফুটত। এসব খাল জলাশয়, পুকুর ও বিল থেকে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ তুলে  তানোর উপজেলার হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকেই।

কিন্তু আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়, খাল, বিল। অপর দিকে তানোর উপজেলা সরকারী খাস পুকুরগুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে, হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ।

শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত। এ ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়।

ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা হয় খই ও নাড়ু। খালবিল ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসের কারণে সুস্বাদু ঢ্যাপ বিলুপ্তি হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন।

তানোর উপজেলা মালার মোড়ের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, বাড়ির আশে পাশের পুকুর ও জলাশয়ে ফুটে থাকা শাপলার (লাইল) কাঁচা ও রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি ভেট দিয়ে খই বানিয়ে খেতাম।

কিন্তু এখন তো এগুলো দেখাই যায় না। তিনি বলেন, দেশে বাড়তি জনগণের চাপের কারণে জলাশয় ও আবাদী জমি ভরাট করে বাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ, পুকুরে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ করার ফলে এখন জলাশয়ও নাই, তাই শাপলা ফুল আর দেখা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তানোর সদর গ্রামের মনজুর রহমান ও কুঠি পাড়া গ্রামের সেতাউর রহমান বলেন, এক সময় তানোর বিল কুমারী বিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটত। কিন্তু এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

তারা বলেন, তানোর বিল কুমারী বিল থেকে হারিয়ে গেছে, জাতীয় ফুল শাপলা, শালুক, লিঘাড়, সিঙ্গার, পদ্ম ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতীর জ্বলীয় ফুল ও ফল।

তানোর উপজেলা বাতাসপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ওবাইদুর রহমান সুজন বলেন, তানোর উপজেলার শীব নদীর উপশাখা বিল কুমারী বিল ও ট্যাংরা বিলে আমাদের বাপ-দাদা এক সময় মাছ ধরার পাশাপাশি শাপলা ফুল ও বিভিন্ন জ্বলীয় ফল তুলে বাজারে বিক্রি করতো।

কিন্তু এখন আর ফুটে না তাই দেখাও জায় না জাতীয় ফুল শাপলা, পদ্ম ফুল ও শালুকসহ জ্বলীয় ফুল ও ফল। তিনি বলেও এক সময় বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়েও দেখা হরহামেশা দেখা যেত জাতীয় ফুল শাপলা। কিন্তু এখন আর পুকুর, খাল, জলাশয়েও দেখা যায়না জাতীয় ফুল শাপলা।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS