বাঘায় দিব্যি চলছে মাদকব্যবসা, দেখেও দেখছে না প্রশাসন!

বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা:
বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অতিতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে মাদকের দাম বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম এতো বাড়লেওসেবনকারির সংখ্যা কমেনি। উপরন্তু একের পর-এক বেড়েই চলেছে অপরাধ প্রবণতা। আর এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজনসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
একই সাথে বাড়তে শুরু করেছে মাদক ব্যবসা। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই মাদক পাচার। এখন প্রতি রাতে ভারত থেকে নদী পথে নেশা জাতীয় দ্রব্য ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও হিরোইন হরহামাশেই প্রবেশ করছে দেশের অভ্যন্তরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব দেখেও দেখছে না আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থাগুলো! কারণ তারা সক্রিয় হলে কখনোই এভাবে মাদক ব্যবসা চলতো না। এনিয়ে সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান প্রতিরোধ ও নাশকতা প্রতিরোধ বিষয়ে অনুষ্ঠিত চারটি মাসিক সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এক শিক্ষক।
স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এর প্রধান কারণ মাদক। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তারা রাত-দিন সমান তালে সীমান্ত এলাকায় মাদক বিক্রি করছে।

এর আগে যারা এক সময়ে আত্মগোপনে ছিল তারা এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা। অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে চুনোপুটিরা গ্রেফতার হলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা বর্তমানে কৌশল পরিবর্তন করে সীমান্তে দৌরাত্ত্ব বৃদ্ধি করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড।
তাঁদের অভিযোগ, কতিপয় ব্যক্তি বড়-বড় মাদক বিক্রেতাদের নিকট থেকে টাকা এনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করছে।
বাঘার আলাইপুর সীমান্ত এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক জানান, অত্র এলাকায় প্রতিনিয়ত বহিরাগত কতিপয় যুবক দামি মোটরসাইকেলযোগে এসে মাদক ক্রয়সহ সেবন করে চলে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে এক সময় এক বোতল ফেন্সিডিল তিনশ থেকে পাঁচশত টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে এর দাম বেড়ে ১৫ শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তার পরেও কমছে না সেবনকারিদের সংখ্যা।
তিনি আরো বলেন, এ উপজেলার সীমান্তবর্তী তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিও মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। তার নামে কেবল বাঘা থানায় রয়েছে ১৪টি মাদকের মামলা। অথচ ভয়ে তার নাম কেউ মুখে আনতা চাচ্ছেন না। তবে তদন্ত করলে সেটি নিমিষে প্রকাশ পেয়ে যাবে। এই মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে এলাকায় মোটর সইকেল ও গরু-ছাগল চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঘা থানা পুলিশের একজন মুখপাত্র এই প্রতিবেদককে জানান, রাজশাহীর বাঘা সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। বহুকাল থেকে এ অঞ্চলে চলে আসছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অনেকেই বাঘাকে মাদকের ‘রাজধানী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এখানে ১০-১২টি গ্রাম মিলে প্রায় তিন শতাধিক মাদক চোরাকারবারি রয়েছে।
তবে থানায় তালিকা রয়েছে দুই শতাধিক ব্যক্তির নামে। এদের মধ্যে দু’একজন এ ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ালেও অনেকেই এ ব্যবসাকে অন্য আরো পাঁচটি ব্যবসার মতো মনে করে রাতা-রাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বিগত আ’লীগ সরকার আমলে বাঘা থানায় এক মাসে ৩৫টি মাদক মামলা রেকর্ড হওয়ার নজির রয়েছে।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে থানায় মাদক মামলা রেকর্ড পূর্বের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত একজন ইউনিয়ন সভাপতি এখন বাঘায় মাদ্রক-চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার নামে কেবল বাঘা থানায় রয়েছে ১৪টি মাদক মামলা।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ অ.ফ.ম. আছাদুজ্জামান জানান, ছোটখাটো দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া থানার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়। এ জন্য তথ্য দিয়ে জনগণকে সহায়তা করতে হবে। অপরদিকে সক্রিয় হতে হবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সীমান্তরক্ষী বিজিবি কর্মকর্তাদেরও।