ঢাকা | জুন ২৭, ২০২৫ - ৫:০৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ইরানে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা অভিযান শুরু

  • আপডেট: Friday, June 27, 2025 - 12:42 am

সোনালী ডেস্ক: ইরান যুদ্ধবিরতির পর এখন দেশের ভেতর দমন পীড়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বিশেষ করে কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে সেনা মোতায়েন, গণগ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা ও মানবাধিকারকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ জুন ইসরাইলের বিমান হামলা শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় চালায় এবং চেকপোস্ট বসিয়ে রাস্তায় টহল জোরদার করে।

ইসরাইল ও প্রবাসী বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অনেকে আশা করেছিলেন, এই সামরিক অভিযান, যা বিপ্লবী গার্ড, নিরাপত্তা বাহিনী ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেছিল, সেটি হয়তো গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করবে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটাবে।

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা অনেক ইরানিই সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যারা মনে করেন সরকারের ভুল নীতির কারণেই ইসরাইলের এই হামলা হয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষবিরোধী কোনো বড় ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়নি।

তবে এক শীর্ষ ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে অবহিত আরও দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে কুর্দি অঞ্চলগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।

বিপ্লবী গার্ড ও বাসিজ আধাসামরিক ইউনিটগুলোকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে এবং এখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার বলেন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি জানান, সরকার ইসরাইলি গুপ্তচর, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠী ‘পিপলস মুজাহেদিন’-এর মতো সংগঠনগুলোর তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা অতীতেও ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে।

দেশের ভেতরের অধিকারকর্মীরা এখন নিভৃত আছেন। তেহরানের এক মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘আমরা এখন খুবই সতর্ক, কারণ সরকার এই পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে বাস্তব শঙ্কা আছে।’ এই কর্মী আরও জানান, তিনি এমন অনেককে চেনেন যাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার বা সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যেন তারা ভিন্নমত প্রকাশ না করেন।

ইরানি মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএনএ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০৫ জনকে রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, গ্রেফতারদের অনেকে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার উরুমিয়ায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কুর্দি অধিকার গোষ্ঠী হেংগাও জানিয়েছে, তারা সবাই কুর্দি। ইরানের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেয়নি।

নিরাপত্তা বিষয়ে অবহিত এক কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তান, ইরাক ও আজারবাইজান সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে তথাকথিত সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। আরেকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, শত শত মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরানের সুন্নি মুসলমান কুর্দি ও বেলুচ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই পারস্যভাষী শিয়া সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ।

ইরাকি কুর্দিস্তানে অবস্থানরত তিনটি প্রধান ইরানি কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জানিয়েছে, ইরান তাদের কিছু সদস্য ও যোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দেশজুড়ে ব্যাপক সামরিক ও নিরাপত্তা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ইরানি কুর্দিস্তান গণতান্ত্রিক পার্টির (কেডিপিআই) রিবাজ খালিলি জানান, ইসরাইলি হামলার তিন দিনের মধ্যেই বিপ্লবী গার্ড কুর্দি অঞ্চলের স্কুলগুলোতে ঘাঁটি স্থাপন করে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় এবং অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে। তিনি আরও জানান, গার্ড বাহিনী তাদের ব্যারাকের আশপাশের শিল্পাঞ্চল খালি করে, প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেয় এবং কেরমানশাহ ও সানানদাজে অতিরিক্ত সেনা পাঠায়।

ফ্রি লাইফ পার্টি অব কুর্দিস্তান (পেজাক)-এর একজন সদস্য, যিনি ‘ফাতমা আহমেদ’ ছদ্মনাম ব্যবহারকারী বলেন, বিমান হামলা শুরুর পর থেকে কুর্দি প্রদেশগুলোতে অন্তত ৫০০ বিরোধী সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

তিনি এবং কুর্দি কোমালা দলের এক কর্মকর্তা যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজনেই জানান, কুর্দি অঞ্চলজুড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, মানুষকে শারীরিকভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে, এবং তাদের মোবাইল ফোন ও কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS