তানোরে ঝুলে থাকা মাটির হাঁড়িতে কবুতর পালন

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে বিভিন্ন গ্রামে এখনো টিকে আছে কবুতরের বাসা হিসেবে মাটির হাঁড়ি। এক সময় মাটির ঘরের কার্নিশে হাঁড়িতে ঝাঁক বেঁধে কবুতর বসে বাকবাকুম ডাক শোনাত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং কালের বিবর্তনে ও ফসলি জমিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারের সেই ডাক এখন খুব বেশি শোনা যায় না।
তবে, ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার জুমার পাড়া গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে। এই গ্রামের বেশ কয়েকজন শৌখিন মানুষ তাদের শখ ও বাড়তি উপার্জনের আশায় এখনও কবুতর পালন করছেন মাটির হাঁড়িতেই। তাদের কল্যাণেই আজও টিকে আছে মাটির হাঁড়ি ও মাটির হাঁড়িতে কবুতর পালন। দোতলা ঘরের কার্নিশে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। নিচে পালন করছেন গরু, ওপরে কবুতর।
তানোর উপজেলার জুমার পাড়া গ্রামের জার্জিস হোসেন বলেন, আমাদের বাড়িতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে কবুতর ছিলো। এখন আর নেই। তিনি বলেন, আমার বাড়ির পার্শ্বের আব্দুল সালামের মাটির দোতলা বাড়ির চারিদিকে ঝুলন্ত মাটির হাঁড়িতে এখনো কবুতর পালন করছেন। তিনি বলেন, এখনো আমাদের গ্রামের বেশ কয়েকজন তাদের মাটির বাড়ির মাটির হাঁড়িতে কবুতর পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, মাটির দোতলা বাড়ির কার্নিশে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে কবুতর পালনে তেমন কোন খচর ও পরিশ্রম হয় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও ঘরবাড়ি নোংড়া হওয়ার কারণে এবং মাটির দোতলা বাড়ি কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত হতে চলেছে মাটির হাঁড়িতে কবুতর পালন। এক সময় পাড়া মহল্লার টিন ও খড়ের বাড়ির ওপর এবং বিভিন্ন ফসলি জমিতে দেখা মিলতো কবুতরের পাল। এখন আর দেখা যায় না।
এ বিষয়ে জুমার পাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন আগে বাড়ি করার পর শখের বসে কয়েকটি প্রজাতির কয়েক জোড়া কবুতর এনে বাড়ির কার্নিশে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে কবুতর পালন শুরু করি। আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে। বাড়িতে খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করা হয়। তিনি বলেন, তার বাড়িতে বর্তমানে ৩শ’রও বেশি কবুতর রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাড়িতে খাওয়া পাশাপাশি প্রায় প্রতিনিদই বাচ্চা বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মাটির ঘরের দোতলার কার্নিশে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা আছে ২শ’ রও মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কবুতর ওই হাঁড়িতে যেন সহজেই প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য হাঁড়ির নিচে লম্বা বাঁশ বাঁধা রয়েছে। কবুতরকে খাবার দেয়া লাগে না।
মাঠে গিয়েই খাবার সংগ্রহ করে। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করা যায়। এভাবে পালন করলে ঘর-বাড়ির চাল নোংরা করে। আমার বাড়িতে গোলা, গোবিন্দ, গিরিবাজ, শিরাজ জাতের কবুতর আছে।
তিনি বলেন, কবুতরগুলো মাঠে সরিষা, কাউন, আখরি ও খুদ খেয়ে থাকে। তবে ফসলে কীটনাশক ও মহামারির কারণে মারা যায় অনেক কবুতর। তারমত ওই গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের মাটির বাড়ির দোতলার কার্নিশে মাটপর হাঁটতে এখনো কবুতর পালন করছেন শখিন এসব গ্রামের মানুষ। ফলে, এখনো চোখে পড়ে গ্রামের মাটির বাড়ির মাটির হাঁড়িতে কবুতর পালনের দৃশ্য।