কবি বন্দে আলী মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ: অযন্ত আর অবহেলায় পড়ে আছে তার নানা স্মৃতি
কলিট তালুকদার, পাবনা থেকে: ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর’, অথবা, ‘ময়নামতির চর’ এর মতো বিখ্যাত ও কালজয়ী কবিতার রচয়িতা শিশু সাহিত্যের নান্দনিক কবি বন্দে আলী মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৭ জুন।
১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন কবি বন্দে আলী মিয়া। আর ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন কবি মৃত্যুবরণ করেন। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হতে বসেছে কবির রেখে যাওয়া জীবন ও কর্মের নানা স্মৃতি। অযন্ত আর অবহেলায় পড়ে আছে কবির সমাধিস্থল।
১৯৭৯ সালের ২৭ জুন ৭৩ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীর কাজিরহাট অঞ্চলের বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন কবি। পরে তাকে কবরস্থ করা হয় নিজগ্রাম পাবনার রাধানগরের নারায়নপুরে।
কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী। কবির মৃত্যুর পর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে কবির পাবনা শহরের রাধানগর নারায়নপুর মহল্লার বসতবাড়ি কবিকুঞ্জ ও রেখে যাওয়া কর্মগুলো।
পাবনাবাসীর দাবির মুখে পাবনা পৌরসভার উদ্যোগে কবি বন্দে আলী মিয়ার নামে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নামকরণ করা হয়। এছাড়াও জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় কবি বন্দে আলী মিয়া নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কবির অপ্রকাশিত অনেক লেখা এখনও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আছে, যেগুলো সরকারি উদ্যোগে ছাপার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। কবির মেজ মেয়ে আফরোজা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, বাবার মৃত্যু বার্ষিকী জাঁকজমক ভাবে পালিত হলে আমরা খুব খুশি হতাম। জানতাম আমার বাবা জীবিত আছে।
কবির নাতি রিয়াদ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কবি সাহিত্যেকদের জন্য অনেক কিছুই করে থাকে। বন্দে আলীর জন্য যদি কিছু করতো, তার বাড়িটা যদি সংরক্ষনশালা করতো, আমরা পরিবারসহ পাবনা বাসী খুশি হতাম।
কবির আর এক নাতনি নাদিরা আক্তার বলেন, কবি বন্দে আলী মিয়ার কোন দিকটি নেই। কত কবির কত কিছু হয় কিন্তু কবি বন্দে আলী মিয়ার জন্য কিছু হয় না। কবির রেখে যাওয়া বই,আসবাবপত্র গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শুধু মাত্র সংরক্ষণের অভাবে। কবির রেখে যাওয়া কর্মের নানা স্মৃতি গুলো সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, কবি বন্দে আলী মিয়া বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একটা সময় কবির রচনাবলি পাঠ্য বইতে স্থান পেয়েছিল। বর্তমানে আমার জানা মতে বর্তমানে কবি বন্দে আলী মিয়ার কোন লেখা নেই। তিনি পাঠ্য বইতে কবির লেখা কবিতা বা রচনাবলি পাঠ্য বাইতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
পাবনার কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জরি খান, কবির বাড়ি ও কবর সংরক্ষণ করে সেখানে সংরক্ষণশালা গড়ে তুলতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার আশ্বাস দেন। সরকারিভাবে কবির মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ না করলেও এ বছর পাবনা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র ও কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদ স্মরণ সভার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছে।











