ঢাকা | জুন ২৫, ২০২৫ - ১:৩১ অপরাহ্ন

ছয় বছরেও দোকানঘর বুঝে পাননি ব্যবসায়ীরা

  • আপডেট: Wednesday, June 25, 2025 - 12:53 am

ঠিকাদার-প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাফিলতি:

চারঘাট প্রতিনিধি: নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হওয়া তো দূরের কথা, মেয়াদ শেষের পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী হাটের মার্কেট নির্মাণ কাজ। এতে গত ছয় বছর ধরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন দোকানঘর হারানো সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে যথাসময়ে ওই মার্কেটের কাজ শেষ হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, চারঘাট উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার নন্দনগাছী হাট। উপজেলার একমাত্র পশুর হাটও এটি। সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় এই হাট থেকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরেও প্রায় ৭৮ লাখ টাকায় এই হাট ইজারা হয়েছে।

প্রতি বছর এত বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায় হলেও সরকারিভাবে এই হাটে গত ৫০ বছরেও কোনো মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে ২০১৮ সালে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে একটি মার্কেট বরাদ্দ হয়। কিন্তু সেই মার্কেটই যেনো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, নন্দনগাছী হাট আধুনিকায়ন করার জন্য ২য় তলা বিশিষ্ট মার্কেট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রায় ২ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু হবার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর এবং কাজ শেষ হবার মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। ২০২০ সালের শুরুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করা হয়।

এ কাজ বাস্তাবায়ন করছে মিম ডেভলেপার অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সেখানকার পুরনো ঘরগুলো ভেঙে জায়গা ফাঁকা করা হয়। এতে ৮২ জন ব্যবসায়ী তাদের দোকান ঘর হারায়। এক বছরের মধ্যে দোকানঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেয়া হয়।

কিন্তু ছয় বছর অতিক্রম করলেও ঘর বুঝে পাননি ব্যবসায়ীরা। দোকানের ঘরের অপেক্ষায় থেকে ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, ছয় বছর আগে কাজ শুরুর সময় বছর খানেক পরে দোকান বরাদ্দ হবে শুনে অনেকে ব্যবসায়ী মার্কেটে ভাল পজিশনে দোকান পাওয়ার আশায় তৎকালীন সরকার দলীয় নেতাদের টাকা দেয়। কিন্তু ঠিকাদার ও প্রকৌশল বিভাগ গুরুত্ব না দেয়ায় কাজ সঠিক সময় শেষ হয়নি। এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এই অবস্থায় এখন তারা পলাতক, নন্দনগাছী হাটও নতুন কমিটি দখল নিয়েছে। এ অবস্থায় দোকান ঘর বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন পুরনো ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, এক বছরের আশ্বাস দিয়ে দোকান ভাঙা হলো। মাস ছয়েক পরে সামনের পজিশন দেয়া হবে বলে টাকা নেয়া হলো। বসে থেকে খেতে খেতে পুঁজি হারিয়ে এখন ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করছি। এখন শুনছি মার্কেটের কাজ শেষ হলে নতুন বাজার কমিটি হয়েছে তারা পজিশন বরাদ্দ দিবে।

আবারও হয়তো টাকা দাবি করা হবে। চাল ব্যবসায়ী মুকিবার হোসেন বলেন, মার্কেটের প্রকল্প নেয়ার সময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করলো। এখন দোকান বরাদ্দের জন্য যার কাছে যাই সেই খারাপ ব্যবহার করে। এই মার্কেট নির্মাণের কারণে আমাদের ব্যবসা একেবারে শেষ।

বছর খানেক আগে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু তারপরও কারো কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, পরিষদের সাথেই নন্দনগাছী বাজার। ব্যবসায়ীদের দুঃখ দুর্দশা দেখে ভীষণ খারাপ লাগে। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিদিনই তারা আমার কাছে জানতে আসেন দোকান কবে বরাদ্দ পাবে কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না।

উপজেলার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদানকারী হাট হওয়া সত্বেও এখানকার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। এ ব্যাপারে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সরওয়ারুল ইসলাম বলেন, কাজ শুরুর সময়ে দোকান ঘর ভাঙা ও সয়েল টেস্ট নিয়ে ঝামেলা ছিল। পরবর্তীতে করোনাকালীন সময়েও কাজ বন্ধ ছিল। এজন্য মার্কেট নির্মাণে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তবে আর কিছুদিন কাজ করলেই কাজ শেষ হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, শুরু দিকে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমি দায়িত্ব নিয়ে মার্কেটের কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কেট হস্তান্তর করা হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS