হুইল চেয়ারে বসে শতবর্ষী মেহেরজান ‘নাতিরা ঠেলা দিবে, আমি গড়ে যামু’

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা মেহেরজান বেওয়া (১০৫)। বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। চলাফেরা তো দূরের কথা, মুখে তুলে খাওয়াতে হয় তাকে।
স্বামী কাশেম সওদাগর মারা গেছেন অনেক আগেই। দুই ছেলের অভাবের সংসারে নানা টানাপোড়ণে কিনতে পারেন নি একটি হুইল চেয়ার।
গত ১০ বারো বছর ধরে এলাকার নেতাকর্মীদের কাছে বলেও জুটেনি একটি হুইল চেয়ার। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঘর ও বারান্দায় শয্যাশায়ী ছিলেন মেহেরজান। তবে এবার এডিপি প্রকল্পের আওতায়
উপজেলা প্রশাসন থেকে হুইলচেয়ার, সেলাইমেশিন ও খেলাধূলা উপকরণ বিতরনে শতবর্ষী মেহেরজান পেয়েছেন একটি হুইল চেয়ার। তাতে বেজায়খুশি তিনি।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে উপজেলা চত্বরে বেশ হাসিমুখে বসেছিলেন মেহেরজান বেওয়া। পিছনে দাড়িয়ে ছিলেন তার ছোট নাতি। চেয়ারে বসে থাকলেও হাত পা নাড়াতে পারেন না মেহেরজান। কথাও বলতে পারেন খুব কম।
তবুও জিজ্ঞেস করতেই মেহেরজান হাসিমুখে বলে উঠেন, বাপু এখন ঠেলা দিলে যাইতে পারমু। বড়িত নাতিরা ঠেলা দিবে। আমি গড়ে যামু। এরপর আর কথা বললেন না মেহেরজান।
পাশে তার বড় নাতি কামরুল ইসলাম দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। কামরুল ইসলাম জানান, আমার দাদির বয়স ভোটার কার্ড অনুযায়ী ১০৫বছর। দাদির কথা অনুযায়ী আমাদের পরিবারের ধারণা আরও দুই ৩ বছর বয়স বেশি হবে।
দাদির প্রায় ১২ থেকে ১৫বছর ধরে একেবারে হাটাচলা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘর ও বাড়ির বান্দায় শুধু শুয়ে থাকে। তাও কোলে করে উঠানো নামানো করতে হয়। মুখে তুলে খাওয়াতে হয়।
নাতি কামরুল বলেন, আমার দাদা মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। তারপর আমার দাদি আমাদের সংসারে হাল ধরেন। কাজ করে তার দুই সন্তানকে বড় করেছেন। আমরাও দিনমজুর। গত ১০ বারো বছরে আমরা কত নেতাকর্মীর কাছে গিয়েছি।
কেউ আমার দাদির জন্য একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে পারেন নি। সবাই আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। তবে এবার আর খালিহাতে ফেরত যাইনি। উপজেলা প্রশাসন আমার দাদির জন্য একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, বুধবার উপজেলা পরিষদ হলরুমে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি প্রকল্পের আওতায় হুইল চেয়ার, সেলাইমেশিন ও খেলাধূলা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
এতে প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের মাঝে ২০টি হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মেহেরজান বেওয়া খুবই বয়স্ক ছিলেন। আমরা যাচাইবাছাই করে তার তাকে একটি হুইলচেয়ার দিয়েছি।