রাজশাহীতে জরিপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমবে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে শুরু হওয়া ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমকে স্বচ্ছ, হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব করতে নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
তাঁরা বলেছেন, এই আধুনিক জরিপ ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা তৈরি এবং তাদের সম্পৃক্ত করা না গেলে হয়রানির আশঙ্কা থেকে যাবে। আর জরিপ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমবে।
বুধবার নগরীর এনজিও ফোরামে ‘ডিজিটাল ভূমি জরিপ বিষয়ে নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এই মতামত তুলে ধরেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসান। এসময় তিনি বলেন, “ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও জনবান্ধব করা বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকারমূলক অঙ্গীকার। ডিজিটাল ভূমি জরিপ সেই লক্ষ্যেরই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এই জরিপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে ভূমির মালিকানা নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলা জটিলতা, মামলা-মোকদ্দমা এবং ভোগান্তি বহুলাংশে কমে আসবে।”
কর্মশালায় জানানো হয়, সরকারের একটি বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কারিগরি সহযোগিতায় পরিচালিত এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজশাহীর ৪০টি মৌজায় কাজ চলছে।
এর মধ্যে ৩৮টি মৌজা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এবং ২টি পবা উপজেলার। গত ১২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত অত্যাধুনিক ক্যামেরাযুক্ত ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ থেকে মৌজাগুলোর ছবি তোলার (এয়ারক্রাফট সার্ভে) কাজ শেষ হয়েছে। এখন মাঠপর্যায়ে ৬৪টি পিলার স্থাপন করে জরিপের পরবর্তী ধাপের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্পের পরামর্শক জিল্লুর রহমান।
তিনি ডিজিটাল জরিপের কারিগরি ও আইনি দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, “এই জরিপ সম্পন্ন হলে জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা বহুলাংশে কমে আসবে এবং নির্ভুল খতিয়ান ও নকশা পাওয়া সম্ভব হবে।”
রুলফাও-এর পরিচালক আফজাল হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার অনন্ত কুমার মুকুটমনি ও অশোক দত্ত।
এছাড়াও ভূমি জরিপকালীন করণীয় বিষয়ে উপস্থাপন করেন এএলআরডি এর কর্মসূচি কর্মকর্তা মির্জা মো. আজিম হায়দার।
মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, “প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে ব্যাপক প্রচারণার বিকল্প নেই। প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।”
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবে দালাল বা অসাধু চক্রের খপ্পরে না পড়ে, সেদিকে প্রশাসন ও নাগরিক সমাজকে নজর রাখতে হবে।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, আপস-এর নির্বাহী পরিচালক আবুল বাসার পল্টু, ‘দিনের আলো’ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মোহনা, বস্তি উন্নয়ন কর্মসংস্থার হাসিনুর রহমান এবং পরিবর্তন-এর পরিচালক রাশেদ রিপন। বক্তারা এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।